এনজেএমসি-র প্রাক্তন কর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কিনারা হয়নি

বন্ধ হয়ে যাওয়া ন্যাশনাল জুট ম্যানুফ্যাকচারার্স কর্পোরেশনের (এনজেএমসি) প্রাক্তন সিএমডি আর সি তিওয়ারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিলেন জুট কমিশনার সুব্রত গুপ্ত। একই অভিযোগ ছিল আর এক উচ্চপদস্থের বিরুদ্ধেও। দ্বিতীয় ব্যক্তির কারাবাস হয়েছে। কিন্তু প্রাক্তন সিএমডি-র কেসের হদিশ নেই।

Advertisement

প্রভাত ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ১৯:৫৭
Share:

বন্ধ হয়ে যাওয়া ন্যাশনাল জুট ম্যানুফ্যাকচারার্স কর্পোরেশনের (এনজেএমসি) প্রাক্তন সিএমডি আর সি তিওয়ারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছিলেন জুট কমিশনার সুব্রত গুপ্ত। একই অভিযোগ ছিল আর এক উচ্চপদস্থের বিরুদ্ধেও। দ্বিতীয় ব্যক্তির কারাবাস হয়েছে। কিন্তু প্রাক্তন সিএমডি-র কেসের হদিশ নেই।

Advertisement

২০০৫ থেকে ২০১০ অবধি এনজেএমসি-র সিএমডি ছিলেন তিওয়ারি। ২০০৯-এর অক্টোবরে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রক এনজেএমসি-র মোট ছ’টি বন্ধ কারখানার মধ্যে তিনটি খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। এগুলি হল উত্তর ২৪ পরগনার কিন্নিসন ও খড়দহ জুটমিল এবং বিহারে কাটিহারের রায় বাহাদুর হরজোট মিল। অবসর নেওয়ার পর তাঁকে এই তিনটি কারখানা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করা হয়। ২০১৩-র ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি উপদেষ্টার পদ থেকেও অবসর নেন। গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর জুট কমিশনার তথা এনজেএমসি-র তিনটি কারখানার তৎকালীন চেয়ারম্যান সুব্রতবাবু দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে কারণ দর্শানোর চিঠিটি দেন।

চিঠিতে বলা হয়, সিএমডি থাকাকালীন তিওয়ারি তাঁর পদের অপব্যবহার করেছেন। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, শ্রমিক নিয়োগ, ঠিকাদার নিয়োগে সব রকম নিয়মকানুন লঙ্ঘন করেছেন প্রাক্তন সিএমডি। তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মেরও অভিযোগ করা হয় চিঠিতে। তাঁকে জানানো হয়, চিঠির তারিখের পর ১৫ দিনের মধ্যে অভিযুক্তকে অভিযোগের জবাব দিতে হবে, নচেত্‌ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Advertisement

তবে অভিযুক্ত প্রাক্তন অফিসার চিঠি পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমি কোনও চিঠি পাইনি। তাই জবাব দেওয়ার প্রশ্নও উঠছে না।” উল্লেখ্য, তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে সিবিআই-ও দুর্নীতির তদন্ত চালিয়েছিল। ২০০৮-এ সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়। কিন্তু ২০১১-য় আচমকাই সেই মামলা থেকে সরে যায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটি। তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ যে কেউ তুলতেই পারেন। তার প্রমাণও তাঁকেই জোগাড় করতে হবে।” তাঁর বিরুদ্ধে জুট কমিশনারের দফতরের স্পষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বস্ত্র মন্ত্রকের উঁচু মহলের চাপে তা নিয়ে এগোন যায়নি বলে জানান কমিশনারের দফতরের এক সূত্র।

এর পাশাপাশি এনজেএমসি-র অর্থ বিভাগের ডিরেক্টর যোগেশ গর্গের বিরুদ্ধেও সিবিআই তদন্ত শুরু করেছিল। তিনি অবশ্য ধরা পড়েন। গত বছর সপ্তাহ দুয়েক তাঁকে কাটাতে হয় আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। তবে তিনি এখন জামিনে মুক্ত। সিবিআই সূত্রে খবর, তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট তৈরি হয়ে গিয়েছে। আদালতে চূড়ান্ত শুনানি শীঘ্রই শুরু হবে।

‘‘এই সব অফিসার মহলের দীর্ঘ দিনের দুর্নীতি এবং পরিচালনায় অদক্ষতার জন্যই এনজেএমসি-র মতো সংস্থায় তালা ঝুলেছে,’’ মন্তব্য কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের নেতা গণেশ সরকারের।

এ দিকে কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, এনজেএমসি-র ছ’টি সংস্থাই পাকাপাকি ভাবে কেনার জন্য ১৬টি সংস্থা দরবার করেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়নগুলির প্রবল বাধায় তা সম্ভব হয়নি। এ বার তিনটি সংস্থা পিপিপি মডেলে পুনরায় চালানোর প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য মন্ত্রকের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। চটশিল্পের সঙ্গে যুক্ত বড় ব্যবসায়ীদের একাংশ এ নিয়ে মন্ত্রকের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে প্রায়ই বৈঠক করছেন। এই সব ব্যবসায়ীর আগ্রহ, পুরোপুরি কেনা সম্ভব না-হলেও এনজেএমসি-র দুর্মূল্য সম্পদ ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি লিজে পাওয়া গেলেও লাভ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement