এমন শাস্তি দেয় কী করে? প্রশ্ন অভিভাবকদের

মায়ের প্রশ্ন শুনে কোনও উত্তর দিচ্ছিল না বছর আটেকের মেয়ে। সকালে মেয়ে যে লেগিংস পরে স্কুলে গিয়েছিল, দুপুরে ফেরার সময় তা না দেখেই ওই প্রশ্ন করেন মা। মেয়ে চুপ করে আছে দেখে কাছে যান মা।

Advertisement

বাসুদেব ঘোষ

বোলপুর শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৫৮
Share:

পড়ুয়ার লেগিংস খুলে নেওয়ার অভিযোগে তুমুল বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র

‘‘কী রে, লেগিংস কোথায়?’’

Advertisement

মায়ের প্রশ্ন শুনে কোনও উত্তর দিচ্ছিল না বছর আটেকের মেয়ে। সকালে মেয়ে যে লেগিংস পরে স্কুলে গিয়েছিল, দুপুরে ফেরার সময় তা না দেখেই ওই প্রশ্ন করেন মা। মেয়ে চুপ করে আছে দেখে কাছে যান মা। তখনই তাঁকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে ওই শিশু। সে জানায়, অন্য রঙের লেগিংস পরে আসায় স্কুলেই সবার সামনে খুলিয়ে নেওয়া হয়েছে তা।

শুধু ওই ছাত্রী নয়, এমন জনা কুড়ি-পঁচিশ জন ছাত্রীর সঙ্গে সোমবার একই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে বোলপুরের মকরমপুর এলাকার একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের বিরুদ্ধে। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য অভিযোগ মানেননি।

Advertisement

অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, যে ছাত্রীদের লেগিংস খুলিয়ে নেওয়া হয়েছে, তারা এখনও ওই ঘটনার মানসিক চাপ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অভিভাবকেরা আরও জানাচ্ছেন, শেষ নভেম্বরে সকালের দিকে ভালই ঠান্ডা পড়েছে বোলপুরে। তাই তাঁরা অনেকেই মেয়েদের লেগিংস পরিয়ে পাঠাচ্ছিলেন। তবে তা স্কুলের নির্দিষ্ট শীতের পোশাকের সঙ্গে না মেলায় যে এমন শাস্তি দেওয়া হবে, তা তাঁরা ভাবতেও পারেননি।

এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘মেয়ের কান্না শুনে কী করব বুঝতে পারছিলাম না। কোনও স্কুল যে এমন অমানবিক হতে পারে, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আমিও কান্নায় ভেঙে পড়ি।’’ আর এক ছাত্রীর মা জানালেন, তাঁর সন্তান এই ঘটনার পর থেকে দিনভরই মনমরা ছিল। খেতে চায়নি, বিকেলে খেলতে যেতে চায়নি। সোমবারের ওই ঘটনার পরে মঙ্গলবারও অনেকে স্কুলে যেতে ইতস্তত করছিল বলে অভিভাবকদের দাবি। এক ছাত্রীর মায়ের কথায়, ‘‘লজ্জায়, ভয়ে আমার ছোট্ট মেয়েটা যেন কুঁকড়ে গিয়েছে।’’

এমন ঘটনা মন থেকে মেনে পারেননি কোনও অভিভাবকই। তাঁরা এককাট্টা হয়ে এর প্রতিবাদ করেছেন। মঙ্গলবার তাঁরা স্কুলে বিক্ষোভ দেখান। এক অভিভাবক রাজেশ শর্মা বলেন, ‘‘বাচ্চাদের প্রতি স্কুলের এই ধরনের আচরণের আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এই ধরনের আচরণ কাম্য নয়।’’ আর এক অভিভাবক মধুমিতা রায় বলেন, ‘‘আমার চেনা এক জনের মেয়ের একই ভাবে পোশাক খুলে নিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় আমরা প্রত্যেকে মর্মাহত। কী ভাবে শিশুদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারেন স্কুল কর্তৃপক্ষ?’’ অভিভাবকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, বুধবার তাঁরা ফের একত্রিত হয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবেন।

ঘটনাচক্রে পৌষমেলার বৈঠক করতে এ দিন বিশ্বভারতীতে এসেছিলেন বীরভূমের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। এই ঘটনার প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে জেলাশাসক বলেন, ‘‘যদি সত্যিই এমন ঘটনা ঘটে থাকে ও ঘটনার সত্যতা প্রমাণ হয়, এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement