Coronavirus in West Bengal

করোনার দেহ ছোঁয়ার দর ১০ হাজার টাকা! অভিযোগ হাওড়ায়

হাওড়ায় এক মাত্র শিবপুর শ্মশানে করোনা-দেহ দাহ করা হচ্ছে।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২০ ০৩:২৫
Share:

ছবি: সংগৃহীত

অভিযোগ, বাড়ি থেকে মৃতের দেহ শববাহী গাড়িতে তুলে শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাওয়া হয়েছিল ১০ হাজার টাকা। শুধু তাই নয়, শ্মশানে মৃতের মুখ দেখতে গেলে দর দেওয়া হচ্ছে ২৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা। স্থানীয় সূত্রের খবর, পুরসভার ডোম সব সময়ে না পাওয়া যাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হাওড়ায় ওই অসাধু চক্র তৈরি হয়েছে।

Advertisement

করোনার চিকিৎসা করাতে গিয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলির লাগামছাড়া বিলের ঠেলায় এমনিতেই নাজেহাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। হাওড়ায় এক মাত্র শিবপুর শ্মশানে করোনা-দেহ দাহ করা হচ্ছে। অভিযোগ, সেখানে দেহ পৌঁছনো নিয়ে শুরু হয়েছে এমনই অমানবিক ঘটনা। প্রশাসন সূত্রের খবর, অনেক ক্ষেত্রেই পুরসভার শববাহী গাড়িতে দেহ তোলার ডোম সব সময়ে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন পুলিশ হাওড়ার ডোমপাড়া থেকে লোক পাঠাচ্ছে। অভিযোগ, তাঁদেরই একটি অংশ মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে টাকা রোজগারের চেষ্টা করছেন। সূত্রের খবর, পুলিশ ও পুরসভার কর্মীদের সামনে প্রায় রোজই এমন ঘটনা ঘটছে। কিন্তু কোভিড-দেহ সৎকারের কাজে সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

শ্মশানে পৌঁছে এমনই হেনস্থার শিকার দু’টি পরিবার এই নিয়ে মুখ খুলেছে। একটি ঘটনায় গত ৯ অগস্ট একটি বেসরকারি হাসপাতালে করোনায় মৃত্যু হওয়া এক যুবকের পরিবার শ্মশানে শেষ বার বাড়ির ছেলের মুখ দেখতে চেয়েছিল। অভিযোগ, তখন তাঁর দেহ শ্মশানে নিয়ে আসা যুবকেরা পরিবারটির থেকে ৫১ হাজার টাকা চান। অন্য দিকে এর তিন দিন পরেই উলুবেড়িয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সেখানে ভর্তি এক বৃদ্ধাকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বাড়ি ফেরার পরের দিনই তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু তিনি কোভিড নেগেটিভ কি না, তা লিখে দেয়নি হাসপাতালটি। পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার পুরসভা ও পুলিশকে জানানোর পরে রাত ৮টা নাগাদ একটি শববাহী গাড়ি পাঠানো হয়। পুরসভার সেই গাড়িতে চালক ছাড়া দুই যুবকও ছিলেন। অভিযোগ, পিপিই পরা ওই যুবকেরা নিজেদের ডোম বলে দাবি করে মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা চান। ওই বৃদ্ধার পুত্রবধূর কথায়, ‘‘অনেক দর কষাকষির পরে সাত হাজার টাকায় রফা হয়। যদি উনি কোভিডে মারা গিয়ে থাকেন, তা হলে সারা রাত কোভিড দেহ বাড়িতে পড়ে থাকাবে, এই ভয়ে রাজি হয়ে যাই।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: শপথ নিয়েছি আমরা, ‘আর কেউ প্রিয়াঙ্কা হব না’​

হাওড়া পুরসভার দাবি, কোভিডে মৃত্যুর দেহ দাহ করতে তাদের নিজস্ব ডোমেরা রয়েছেন। কিন্তু শ্মশান পর্যন্ত দেহ আনা ওই বেসরকারি ডোমেরাই ওই দর হাঁকছেন। তা নিয়ে সেখানে গোলমালও হচ্ছে। পুরসভার শববাহী গাড়ির চালকদেরও অভিযোগ, ডোম পরিচয় দেওয়া যুবকেরা পুরসভার কর্মী নন। পুলিশই ওঁদের পাঠাচ্ছে মৃতদেহ তুলতে। ওঁরাই এ ভাবে মৃতদেহ পিছু মোটা টাকা দাবি করছেন।

হাওড়া জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, কোভিডে মৃতের দেহ স্বচ্ছ প্লাস্টিকে মুড়ে রাখা হয়। সেই অবস্থায় মৃতের মুখ দেখাতে হবে হাসপাতালকেই। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘হাসপাতালগুলি অনেক ক্ষেত্রে দেহ শ্মশানে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সেখানেই মৃতের মুখ দেখানোর নামে আত্মীয়দের থেকে টাকা চাওয়া হচ্ছে।’’

পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘শ্মশানের বাইরে বেসরকারি ডোমেদের টাকা চাওয়ার অভিযোগ আমাদের কানেও এসেছে। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’

টাকা চাওয়ার কথা স্বীকার করে শিবপুরের ডোমেদের নেতা রাজা মল্লিকের বক্তব্য, ‘‘কোভিডে মৃতদেহের মুখ দেখতে চাওয়াটাই তো অন্যায়। মানুষ যাতে মুখ দেখার দাবি না করে সে কারণেই টাকা চাওয়া হচ্ছে।’’

হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অনেক সময়ে কোভিড মৃতদেহ আনার জন্য ডোমপাড়া থেকে ডোম পাঠানো হয়। তাঁরাই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement