—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
রাজ্যের উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। সাত বছর ধরে কলকাতা হাই কোর্টে চলছে এই মামলা। এ বার সেই নিয়োগ পরীক্ষার ওএমআর শিট (উত্তরপত্র)-এও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। ওই অভিযোগ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে অতিরিক্ত হলফনামা জমা দিলেন এক মামলাকারী। তাঁর আইনজীবীর বক্তব্য, ওই নিয়োগের ওএমআর শিট মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল নীলাদ্রি দাসকে, যাঁর বিরুদ্ধে এসএসসির নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ওএমআর মূল্যায়নে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। ওই অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতারও করেছিল সিবিআই। যদিও এসএসসি মামলাকারীদের ওই দাবি খারিজ করে দেয়। বৃহস্পতিবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শেষ হয়। রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছে আদালত।
উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একাধিক ত্রুটির অভিযোগ তুলে ধরে হাই কোর্টে মামলা দায়ের হয়। বৃহস্পতিবার ওই মামলার শুনানিতে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য সওয়াল করে জানান, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতি পদে পদে ‘অনিয়ম’ হয়েছে। ২০২৩ সালে শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া থেকে প্রথমে ১,৪৬৩ জনকে বাদ দেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্তের পিছনে নির্দিষ্ট কোনও কারণ চাকরিপ্রার্থীদের জানানো হয়নি। পরে চার বার তা খতিয়ে দেখে এসএসসি। শেষে ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়েন ৭৪ জন। সে ক্ষেত্রেও সঠিক নিয়ম মানা হয়নি বলে দাবি করেছেন বিকাশ। মামলাকারীদের অন্য আইনজীবী সুবীর সান্যালের সওয়াল, কাউন্সেলিংয়ের সময় সংরক্ষণ নীতি মেনে চলা হয়নি। ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তফসিলি জাতি এবং জনজাতিদের সংরক্ষণ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি, সেখানে মহিলাদের সংরক্ষণ নিয়েও ত্রুটি হয়েছে। মামলাকারীদের আর এক আইনজীবী জয়ন্ত মিত্রের বক্তব্য, একটি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নতুন শূন্যপদ যুক্ত করা হয়। প্রথমে ১৪,৩৩৯ শূন্যপদে নিয়োগের কথা জানিয়েছিল এসএসসি। পরে শূন্যপদ এবং স্কুলের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে। ফলে শূন্যপদও বৃদ্ধি হওয়ার কথা। আরও প্রায় ১০ হাজার শূন্যপদ বেশি হওয়ার কথা ছিল। অথচ তাদের বঞ্চিত করেই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মামলাকারীদের আর এক আইনজীবী ফিরদৌস শামিম অতিরিক্ত হলফনামা দিয়ে আদালতে দাবি করেন, এই পরীক্ষার ওএমআর শিটেও দুর্নীতির আশঙ্কা রয়েছে। এর মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত নীলাদ্রিকে উচ্চ প্রাথমিকেও মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সওয়াল, এই অভিযোগের কোনও গুরুত্ব নেই। ওই সংক্রান্ত মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। এসএসসির অন্য নিয়োগের ওএমআর শিট মূল্যায়নে দুর্নীতি প্রমাণিত হয়নি। এসএসসির আইনজীবী সুতনু পাত্র সওয়াল করে জানান, ২০১৫ সালে উচ্চ প্রাথমিকের ওএমআর শিট মূল্যায়ন হয়েছিল। বাকি ক্ষেত্রে ওএমআর মূল্যায়ন হয়েছিল ২০১৬ সালে। অর্থাৎ, দু’টি ঘটনার সঙ্গে মিল খোঁজা অর্থহীন।
২০১৫ সাল থেকে উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে। হাই কোর্টের নির্দেশে বার বার এই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গিয়েছে। ২০১৯ সালে প্রথম মেধা তালিকা বাতিল করে দেয় উচ্চ আদালত। ২০২৩ সালে প্যানেল প্রকাশ করার অনুমতি দেয় আদালত। তখন বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, প্যানেল প্রকাশ করা যেতে পারে, তবে কাউকে নিয়োগের সুপারিশ করতে পারবে না এসএসসি। তার পরে মামলাটি যায় নতুন ডিভিশন বেঞ্চে। বৃহস্পতিবার সেখানে শুনানি শেষ হল। প্রায় সাত বছর পরে এখন রায়ের অপেক্ষায় চাকরিপ্রার্থীরা।