Covid-19

করোনা রোগীর সঙ্গে অন্য রোগীও রাখছে নার্সিংহোম?

চিকিৎসকদের একটি অংশের অভিযোগ, শহর ও সংলগ্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো যে অজস্র নার্সিংহোম গজিয়ে উঠেছে, মূলত সেখানেই এই অনিয়ম চলছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২০ ০৪:১৮
Share:

প্রতীকী ছবি

ওয়ার্ডের একটি শয্যায় কোভিড রোগী। অদূরেই অন্য একটি শয্যায় নন-কোভিড রোগী। তাঁদের দেখভাল করছেন একই নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে এ ভাবেই শহর ও শহর সংলগ্ন অনেক নার্সিংহোমে একসঙ্গে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে চিকিৎসক মহলের একাংশের মধ্যেও।

Advertisement

কারণ, ওই নার্সিংহোমগুলি থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে গিয়েছে বলেই দাবি চিকিৎসকদের। ফলে শুধু নন-কোভিড রোগীরাই নন, স্বাস্থ্যকর্মীরাও সংক্রমিত হতে পারেন।

তবু লুকিয়ে-চুরিয়ে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীর সমান্তরাল এই চিকিৎসা ব্যবস্থা চলছে বলেই অভিযোগ।

Advertisement

চিকিৎসকদের একটি অংশের অভিযোগ, শহর ও সংলগ্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো যে অজস্র নার্সিংহোম গজিয়ে উঠেছে, মূলত সেখানেই এই অনিয়ম চলছে। প্রথমত, ওই সব নার্সিংহোমে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের আলাদা রাখার পরিকাঠামোই নেই। দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য যে পিপিই দরকার, তা-ও নেই অনেক জায়গাতেই। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘একই ওয়ার্ডের মধ্যে ডান দিকে হয়তো নন-কোভিড রোগী। বাঁ দিকে একটু দূরে কোভিড রোগী। এমনকি একই নার্স বা আয়া তাঁদের দেখভাল করছেন!’’ অন্য এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘পুরোটাই লুকিয়ে-চুরিয়ে চলছে। বাইরে থেকে কেউ জানতেও পারবেন না। এতই গোপনীয়তা রেখে সবটা হয়।’’

বাস্তবেও দেখা গেল তা-ই। নিয়ম লঙ্ঘন করে চিকিৎসা চালানোর অভিযোগ উঠেছে, বনহুগলির এমনই এক নার্সিংহোমে ফোন করলে সেখানকার এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা কোনও কোভিড রোগী ভর্তি নিই না। এখানে কোনও কোভিড রোগী নেই।’’ কোভিড রোগী ভর্তি নেন কি না, দক্ষিণ শহরতলির এমনই এক নার্সিংহোম কর্তাকে প্রশ্ন করাতেও সেই একই উত্তর।— ‘‘আমরা ভর্তি নিই না।” কিন্তু সংশ্লিষ্ট দুই নার্সিংহোমেরই কয়েক জন চিকিৎসকের অভিযোগ, কোভিড এবং নন-কোভিড রোগীদের একসঙ্গে রেখেই চিকিৎসা চালানো হচ্ছে সেখানে।

উদ্বিগ্ন চিকিৎসকদের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে দু’দিক থেকেই সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। প্রথমত, রোগীরা সংক্রমিত হতে পারেন। দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলিতে চিকিৎসক, নার্স-সহ যে স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন, তাঁদেরও সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। কারণ, তাঁরা হয়তো ন্যূনতম সুরক্ষা নিয়ে সেখানে কাজ করছেন। বর্তমানে সংক্রমণের রেখচিত্র যে ভাবে ঊর্ধ্বমুখী, তাতে কোথাও নিয়ম না মানলে কোভিড দাবানলের আকারে ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেই অনিয়ম যদি কোনও নার্সিংহোম বা হাসপাতাল করে, তবে তা আরও আতঙ্কের।

আরও পড়ুন: করোনা নেগেটিভ, তবু ১৪ দিন পরে আসার ‘নিদান’

কার্ডিয়োথোরাসিক শল্য চিকিৎসক কুণাল সরকারের কথায়, ‘‘নিয়ম না মানায় এই সব নার্সিংহোমে হয়তো ১০-১২ জন স্বাস্থ্যকর্মী একসঙ্গে সংক্রমিত হয়ে গেলেন। তখন পুরোটাই বন্ধ করতে হবে।’’ কোভিড কেন্দ্রের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘ছোট নার্সিংহোমে স্থান সঙ্কুলানের অসুবিধা থাকলেও কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। তা হলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’’

তবে এই ধরনের কোনও অভিযোগ এখনও জমা পড়েনি বলে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন সূত্রের খবর। কমিশনের চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়ে ইতিমধ্যেই আমরা একাধিক পদক্ষেপ করেছি। এখনও এই সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেব।’’

আরও পড়ুন: ‘মনের জোর থাকলেই কিন্তু অর্ধেক যুদ্ধ জেতা হয়ে যাবে’

(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে—পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ১২৮। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৪৮। তার আগের দু’দিন ছিল ১১৫ এবং ১০১। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ১৩৬ এবং ১৪২। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ১২৮, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার গড় পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement