WB Panchayat Election 2023

‘কুড়মি-কাঁটায়’ বিপাকে সব দলই

কংগ্রেস নেতৃত্ব খোলাখুলি দাবি করছেন, ‘কুড়মি-কাঁটা’ সব থেকে বেশি বিঁধেছে ‘হাতে’। কুড়মি প্রার্থীরা যে জেলার একাংশে তাদেরও সমস্যায় ফেলেছেন, সে কথা স্বীকার করছে গেরুয়া শিবিরও। 

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২৩ ০৯:০১
Share:

—প্রতীকী ছবি।

‘কুড়মি-কাঁটা’ কি এ বারে শুধু তৃণমূলকেই বিঁধছে? নাকি জঙ্গলমহলের ভোটে কুড়মিদের ‘ঘাঘর ঘেরা কেন্দ্রীয় কমিটি’ গড়ে লড়াইয়ের ধাক্কা লাগছে অন্য দলগুলির গায়েও?

Advertisement

পুরুলিয়ার দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে কুড়মি প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের পর থেকেই প্রশ্নগুলি নিয়েই চর্চা শুরু হয়েছে। তৃণমূল থেকে বিজেপি, সকলেই স্বীকার করেছে, কুড়মি সমাজের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা তারা করেনি। কংগ্রেস নেতৃত্ব খোলাখুলি দাবি করছেন, ‘কুড়মি-কাঁটা’ সব থেকে বেশি বিঁধেছে ‘হাতে’। কুড়মি প্রার্থীরা যে জেলার একাংশে তাদেরও সমস্যায় ফেলেছেন, সে কথা স্বীকার করছে গেরুয়া শিবিরও।

পুরুলিয়ায় গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় পাঁচশো আসন, পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রায় একশো ও জেলা পরিষদের ২৪টি আসনে লড়ছেন কুড়মি প্রার্থীরা। তাতে কম-বেশি সমস্যায় সব দলই। এই জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতস্তরে ১৮১৯টি আসন ও পঞ্চায়েত সমিতির ৩১৪ আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি কংগ্রেস। তাদের দাবি, মানবাজার ১ ও ২, পুরুলিয়া ১ ও ২, বান্দোয়ান, হুড়া, পুঞ্চা, আড়শার মতো ব্লকগুলিতে কুড়মিদের দাপটে প্রার্থী দিতে সমস্যায় পড়েছে তারা। বেশ কিছু আসনে প্রার্থী দিয়ে কুড়মি সমাজের ‘চাপে’ মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে হয়েছে। বাঘমুন্ডির প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নেপাল মাহাতোর এলাকাতেও কুইরি, শিরকাবাদ, সিন্ধ্রী— এই তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় কুড়মি আন্দোলনের প্রভাবে প্রার্থী দিতে বেগ পেয়েছে কংগ্রেস।

Advertisement

মানবাজার-২ ব্লকের অন্তত ৫টি অঞ্চলে আবার কংগ্রেসের যে নেতাদের ঘাড়ে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব ছিল, তাঁরা নিজেরাই কুড়মি সমাজ সমর্থিত নির্দল হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। একই ছবি বান্দোয়ানের সুপুরডি, সিমলাপাল অঞ্চলে। কিছু ক্ষেত্রে আবার কংগ্রেসের গতবারের জয়ী প্রার্থীরা এ বার কুড়মি সমাজের হয়ে লড়ছেন। নেপালের স্বীকারোক্তি, ‘‘কুড়মিদের জাতিসত্তার সামাজিক আন্দোলনে কংগ্রেসের অনেকে যুক্ত ছিলেন। তাঁদের একটা বড় অংশ কুড়মি সমর্থিত নির্দল হয়ে ভোটে দাঁড়ানোকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।’’

রাজনীতি মুক্ত কুড়মি গ্রামের দাবিকে সামনে রেখে যখন ‘ঘাঘর ঘেরা’ আন্দোলন শুরু হয়, তখন তৃণমূল, বিজেপি, বাম দলের কিছু জনপ্রতিনিধি দল ছাড়েন সমাজের ডাকে। ভোগাচ্ছে প্রার্থী-সঙ্কটও। পুরুলিয়ায় বিজেপির ৬ জন বিধায়ক ও দুই সাংসদ থাকা সত্ত্বেও গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩৩৭টি ও পঞ্চায়েত সমিতির ১৭ আসনে পদ্ম-প্রার্থী নেই। গেরুয়া অন্দরে শোনা যাচ্ছে, কুড়মি প্রার্থীরাই ‘কারণ’। বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী মানছেন, ‘‘জেলার কয়েকটি ব্লকে প্রার্থী না দেওয়ার ক্ষেত্রে কুড়মি সমাজ একটা ‘ফ্যাক্টর’ হয়েছে।’’ তবে সিপিএমের দাবি, এমন সমস্যা তাদের হয়নি।

ঘাঘর ঘেরা কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা অভিজিৎ কাটিয়ারের বক্তব্য, ‘‘জাতিসত্তা ও সামাজিক দাবি আদায়ে আমাদের যে আন্দোলন চলছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে অংশ নেওয়া তারই অংশ।’’ আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল নেতা অজিত মাহাতোও বলেন, ‘‘আগেই সিদ্ধান্ত নিই, রাজনৈতিক দলগুলির প্রতীকে আমাদের লোক ভোট দেবে না। সেটাই হচ্ছে।’’

বিপাকে তৃণমূলও। জেলা পরিষদের গত বার দলের বিজয়ী পাড়া এলাকার মণিকা মাহাতো লড়ছেন সমাজের হয়ে। জয়পুরের সীমারানি মাহাতো, ঝালদা ১ ও ২ ব্লকে যথাক্রমে অসীমা মাহাতো ও নিরূপা মাহাতো মহিলা তৃণমূলের ব্লক সভানেত্রী হওয়া সত্ত্বেও নির্দল প্রার্থী হয়েছেন জেলা পরিষদে। সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘জাতিসত্তার আন্দোলন ভোটে প্রভাব ফেলবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement