নামেই বন্ধ শিথিল, ইদে বাজার বন্ধই

বেলা দুটোয় শিলিগুড়ির বর্ধমান রোডের একটি বিরিয়ানির দোকানের সামনে দেখা পাওয়া গেল এমনই কয়েক জনের। তাঁরা দার্জিলিঙের বাসিন্দা। বলছিলেন, ‘‘সকালে নমাজ পড়েই রওনা হয়েছি। কোনও মতে খেয়ে বাজারে ছুটেছি। আনন্দ করব কী ভাবে!’’

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৭ ০৫:২২
Share:

ঠাঁইনাড়া: পাহাড় ছেড়ে শিলিগুড়িতে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

এত দিন তাঁরা ইদের দিন নমাজ সেরে যেতেন কেভেন্টার্সে। বা গ্লেনারিজে। দিনভর ম্যাল জুড়ে চলত হইচই। কিন্তু সোমবার একেবারেই অন্য ছবি দেখল ‘পাহাড় কি রানি’। বারো ঘণ্টার জন্য বন্‌ধ শিথিল করেছে মোর্চা। কিন্তু দোকানপাট, হাটবাজার সবই বন্ধ। এই অবস্থায় উৎসবের আনন্দ তো দূর, অনেকেই দ্রুত এক বার সমতল ঘুরে গেলেন। কারণ, ভাঁড়ারে যে টান পড়েছে।

Advertisement

বেলা দুটোয় শিলিগুড়ির বর্ধমান রোডের একটি বিরিয়ানির দোকানের সামনে দেখা পাওয়া গেল এমনই কয়েক জনের। তাঁরা দার্জিলিঙের বাসিন্দা। বলছিলেন, ‘‘সকালে নমাজ পড়েই রওনা হয়েছি। কোনও মতে খেয়ে বাজারে ছুটেছি। আনন্দ করব কী ভাবে!’’ আশঙ্কার ভাব চোখেমুখে স্পষ্ট। বলছিলেন, ‘‘ক’দিন বন্‌ধ থাকবে কে জানে! তাই নিজেদের তো বটেই, চেনাশোনাদের অনুরোধ মতো চিনি, নুন, তেল, সয়াবিন, চাওমিন, ডিম যতটা পারলাম, নিলাম।’’ ম্লান হেসে এর পরে রওনা দিলেন দার্জিলিঙের দিকে। সন্ধ্যা ৬টার আগে পৌঁছতে হবে যে!

পাহাড়ের জনসংখ্যার ৮-১০ শতাংশ সংখ্যালঘু মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, কেন এ ভাবে নাম-কা-ওয়াস্তে বন্‌ধ শিথিল করল মোর্চা? ইদের আগের রাত থেকে যে কেনাকাটা চলে, ইদের দিন নমাজের পরে মানুষ যে উৎসবে মাতেন, তার কোনওটাই তো হল না। তাঁদের কেউ কেউ বললেন, ‘‘আমরা তো আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পথেও নেমেছি। তা হলে এমন করা হল কেন?’’ এই ক্ষোভের খবর পৌঁছেছে মোর্চার কাছেও। দল সূত্রের খবর, মোর্চার কয়েক জন নেতা তাঁদের বাধ্যবাধকতার কথা জানিয়ে সংখ্যলঘু সম্প্রদায়ের কয়েক জন প্রভাবশালীর কাছে দুঃখপ্রকাশও করেছেন। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা জানান, ইদের দিন যাতে সব স্বাভাবিক রাখা হয়, সে জন্য কয়েক জন দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু তা মানতে চাননি দলের অধিকাংশ সদস্যই। তাই শুধু পরিবহণে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

কিন্তু তাতে কি লাভ হয়েছে কিছু? সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন তা মনে করেন না। বন্‌ধ সামান্য শিথিল হতেই তাঁদের কেউ ছুটে গিয়েছেন দোকানবাজারে। অনেক অনুরোধ, উপরোধ করে চেনা পরিচিতের দোকানের পিছনের দরজা দিয়ে হয়তো কিছুটা সিমুই বা কাজু-কিসমিস পেয়েছেন। দার্জিলিঙের চকবাজার থেকে কালিম্পঙের ডম্বর চক পর্যন্ত একই ছবি।

বিরক্ত হোটেল মালিকরাও। ইদের সময়ে পাহাড়ে বেড়াতে আসেন সমতলের অনেকেই। দেদার খাওয়াদাওয়া চলে। কয়েক জন হোটেল মালিক জানান, মে মাস থেকেই ইদের বরাত মিলছিল। ইদের সময়ে সব মিলিয়ে পাহাড়ের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলি কোটি টাকার ব্যবসা করে। সেই হিসেবে বিপুল অঙ্কের ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির কথা ঘরোয়া আলোচনায় মানছেন মোর্চার অনেকেই। কিন্তু হাত তুলে বলছেন, ‘‘এ বারে আমরা নাচার!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement