প্রতীকী ছবি।
দেশের জন্য স্বাধীনতার যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা ছিল অবিভক্ত বাংলার। সেই স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন করার জন্য সর্বভারতীয় কংগ্রেস যে কমিটি গড়েছে, তাতে ঠাঁই হয়নি বাংলারই কোনও প্রতিনিধিরই। রাজ্যে ভোটে বিপর্যয় বা সংগঠনে ধস সত্ত্বেও কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের এমন সিদ্ধান্ত বাংলার অতীত ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মানানসই নয় বলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বঙ্গ কংগ্রেসের মধ্যে থেকেই।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চেয়ারম্যান করে স্বাধীনতার ৭৫ বর্যপূর্তি উদযাপনের জন্য বছরভর নানা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও সমন্বয় করার লক্ষ্যে এআইসিসি ১১ সদস্যের একটি কমিটি গড়েছে। সেই কমিটির আহ্বায়ক মুকুল ওয়াসনিক, যিনি আদতে মহারাষ্ট্রের মানুষ। স্বয়ং মনমোহনের আদি সাকিন অবিভক্ত পঞ্জাব। প্রাক্-স্বাধীনতা আমলের আন্দোলনে যে তিন প্রদেশের উজ্জ্বল ভূমিকা ছিল, পঞ্জাব ও মহারাষ্ট্র ছাড়া অপরটি হল বাংলা। কিন্তু এআইসিসি-র কমিটিতে কেরলের এ কে অ্যান্টনি ও মুল্লাপল্লি রামচন্দ্রন, কাশ্মীরের গুলাম নবি আজাদ, বিহারের মীরা কুমার, অসমের প্রদ্যোৎ বরদলইয়েরা থাকলেও বাংলার কেউ নেই। প্রশ্ন উঠেছে এই অনুপস্থিতি নিয়েই।
রাজ্যের প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান শুক্রবার এই বিষয়ে সরাসরি চিঠি পাঠিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে। চিঠিতে তাঁর বক্তব্য, স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার ‘গৌরবজনক ভূমিকা’ মাথায় রেখে এমন কমিটিতে এই রাজ্যের কোনও ব্যক্তিকে রাখা হলে তা উপযুক্ত হত। বিষয়টি বিবেচনার জন্য সভানেত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন মান্নান। ইতিহাস বিকৃতির যে প্রবণতা চারদিকে চলছে, তার প্রেক্ষিতে প্রকৃত ইতিহাসের তথ্য প্রচার করার দিকে নজর দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
একই মত দলের আর এক বর্ষীয়ান নেতা ও রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমিও এই বিষয়ে হাইকম্যান্ডকে চিঠি দেব। স্বাধীনতার লড়াইয়ে বাংলার উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কারণেই গোপালকৃষ্ণ গোখলে লিখেছিলেন, বাংলা আজ যা ভাবে, ভারত তা ভাবে আগামী কাল। মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী অবিভক্ত বাংলায় দু’বার অনশন করেছেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কর্মস্থল ছিল বাংলা। স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপনের কমিটিতে এই রাজ্য থেকে কারও না থাকা বাংলার ইতিহাসের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়, বিষয়টিতে আবেগের প্রশ্নও জড়িত।’’
লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অবশ্য কমিটি গঠন নিয়ে বিশেয প্রশ্ন তোলার মতো কিছু দেখছেন না। তাঁর মতে, গোটা দেশে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপনের জন্য একটি কমিটি গড়া হয়েছে। সেখানে কংগ্রেসের উল্লেখযোগ্য নেতাদেরই রাখা হয়েছে। এখানে আলাদা করে বাংলার সম্পর্ক টেনে বিচার করা উচিত নয়।