—প্রতীকী ছবি।
ভোর সাড়ে ৫টা। মিঠে রোদ ছড়িয়ে জমিতে। রায়গঞ্জ সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে, ঝিটকিয়া এলাকায় আমন ধানের বীজতলা রোপণে ব্যস্ত দিলবর আলি, মকবুল আলি, অনাদি বর্মণেরা। এত সকালে? ওঁদের জবাব, “বৃষ্টি কম। অনেক খরচে বীজতলা তৈরি করেছি। এক মাসের মধ্যে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে ধান বাঁচানো মুশকিল। তাই সকাল-সকাল বীজতলা রোপণ করছি। কঠিন লড়াই।”
এলাকা ঘুরে মেলে ইঙ্গিত, লড়াই ‘কঠিন’ রাজ্যের তিন বড় দলের প্রার্থীরও, যাঁরা ১০ জুলাই রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। মাসখানেক আগেই লোকসভা ভোটের ফল বেরিয়েছে। রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণীকে ৬৮,১৯৭ ভোটে হারিয়েছেন বিজেপির কার্তিকচন্দ্র পাল। সেই ভোটে রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে কৃষ্ণ পিছিয়ে ৪৬,৭৩৯ ভোটে, শহরে ২১,৪১৩ ভোটে। বিজেপির টিকিটে কৃষ্ণ ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালকে ২০,৭৪৮ ভোটে পরাজিত করেছিলেন। কানাইয়া বলছেন, “২০১৯-এর লোকসভা ভোটে কালিয়াগঞ্জে প্রায় ৫৭ হাজার ভোটে পিছিয়ে থেকেও বছরের শেষে বিধানসভা উপনির্বাচনে আড়াই হাজার ভোটে জেতে তৃণমূল।”
তবে এ বারে বিষফোঁড়ার মতো আছে জেসিবি-কাণ্ডের ছায়া। কৃষ্ণের অবশ্য দাবি, “রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পকে সামনে রেখে উপনির্বাচন হচ্ছে।” তা হলে লোকসভা ভোটে তৃণমূল পিছিয়ে কেন? দল সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জ পুর-এলাকার নেতাদের সঙ্গে না রেখে প্রচারের অভিযোগ উঠেছিল কৃষ্ণের বিরুদ্ধে। কিন্তু এ বারে দলের ফল খারাপ হলে ব্লক থেকে শহরের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের ‘পদ’-এ কোপ পড়তে পারে। তাই এ বার কৃষ্ণের সমর্থনে রায়গঞ্জে দলের সব গোষ্ঠী প্রচারে নামতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তাতেও সব সুর মিলছে কি, প্রশ্ন তৃণমূলেই।
বিজেপির প্রার্থী মানসকুমার ঘোষের ক্ষেত্রে আবার রয়েছে দলের একাংশের বিরোধিতা। রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের প্রাক্তন সহ-সভাপতি মানস বছরখানেক আগে বিজেপিতে যোগ দেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ‘ঘনিষ্ঠ’ রায়গঞ্জের বিজেপি সাংসদ কার্তিক পালের চেষ্টাতেই তিনি টিকিট পেয়েছেন। তাতেই বিজেপিতে ‘গৃহযুদ্ধ’ চরমে। ইস্তফা দিতে চেয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে চিঠি পাঠান বিজেপির জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকার, বিজেপির যুব মোর্চার জেলা সহ-সভাপতি শুভম সান্যাল। দল অবশ্য তাঁদের ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেনি। দলের নির্দেশে বাসুদেব প্রচারেও নামেন।
বিজেপির এক প্রাক্তন জেলা নেতা বলরাম চক্রবর্তী এই উপনির্বাচনে লড়ছেন। শোনা যাচ্ছে, দলের অনেকেই তাঁর সঙ্গে। প্রশ্ন উঠছে, জিতে কৃষ্ণের মতো তৃণমূলে ফিরবেন না তো মানস? মানস বলছেন, “নীতি, আদর্শ ও শপথ নিয়ে বিজেপি করছি। দল বদল করে মানুষের বিশ্বাসে আঘাত দেব না।” কার্তিক ও বাসুদেবের দাবি, “মানসকে দল প্রার্থী করেছে, এটাই শেষ কথা।”
লড়াই কঠিন, মানছেন বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী মোহিত সেনগুপ্তও। লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ১৪,৪৭৭। অথচ, মোহিত লোকসভা ভোটের প্রচারে অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন। টানা এক দশক রায়গঞ্জের বিধায়ক, দেড় দশকের বেশি সময় রায়গঞ্জের পুরপ্রধান। তবে ২০১৭ সাল থেকে ক্ষয় ধরেছে কংগ্রেস ভোট ব্যাঙ্কে। বছর তিয়াত্তরের মোহিত অবশ্য প্রচারে খামতি রাখছেন না। বলছেন, “দল রাজ্যে ও কেন্দ্রে ক্ষমতায় না থাকলেও আমৃত্যু কংগ্রেসের নীতি ও আদর্শ নিয়ে বাঁচব। তৃণমূল বা বিজেপিতে যোগ দিইনি। দেব না।”
বাকিটা? বলবে সময় ও রায়গঞ্জের জনগণ।