বীরভূমের দুবরাজপুরে রাজ্য পুলিশের প্রয়াত সাব ইনস্পেক্টর অমিত চক্রবর্তী।
বীরভূমের দুবরাজপুরে রাজ্য পুলিশের সাব ইনস্পেক্টর অমিত চক্রবর্তী খুনের ঘটনায় বেকসুর খালাস পেলেন অভিযুক্তরা। রায় দেওয়ার সময় বিচারক তদন্তকারী পুলিশের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও তথ্য প্রমাণই দিতে পারেনি তদন্তকারীরা। তাই প্রমাণের অভাবেই বেকসুর খালাস হলেন অভিযুক্তরা।”
২০১৪ সালের জুন মাসে একটি পুকুর খোঁড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ শুরু হয় তৃণমূল এবং সিপিএম সমর্থকদের মধ্যে। ৩ জুন রাতে দুবরাজপুর থানার পুলিশের কাছে খবর আসে স্থানীয় সিপিএম নেতা মকতুল হোসেনের বাড়িতে হামলা করেছে তৃণমূল সমর্থকরা। ছ’-সাত জন কনস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে আউলিয়া গ্রামে পৌঁছন সাব ইনস্পেক্টর অমিত চক্রবর্তী। সাঁইত্রিশ বছর বয়সী ওই পুলিশ অফিসার মৃত্যু কালীন জবানবন্দিতে জানিয়েছিলেন, সেই রাতে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আলিম শেখের নেতৃত্বে তৃণমূল সমর্থকরা মকতুলের বাড়িতে হামলা চালানোর চেষ্টা করেন। সেই সময় তিনি মকতুলের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সেই জনতাকে সরে যেতে বলেন। ওই অবস্থায় তাঁর দিকে বোমা ছোড়া হয়। পেটে বোমার আঘাত লাগে তাঁর। গুরুতর জখম অবস্থায় দুর্গাপুরের একটি হাসপাতালে প্রায় দু’মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর তাঁর মৃত্যু হয়।
সেই সময়ে বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া তদন্তের জন্য বিশেষ দল গঠন করেন এবং তৃণমূল নেতা শেখ আলিম-সহ ৪৮ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করে পুলিশ। পরে ঘটনার ৮৯ দিনের মাথায় পুলিশ ৫০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করে। গ্রেফতার করা হয় ২১ জনকে, কিন্তু ফেরার থাকেন মূল অভিযুক্ত আলিম।
আরও পড়ুন: মহাজোটের প্রস্তুতি শুরু, নবান্নে বৈঠকে মমতা-চন্দ্রবাবু
আরও পড়ুন: পাঁচন তরজায় তাতছে বীরভূম
এই মামলা নিয়ে প্রথম থেকেই রাজনৈতিক টানাপড়েন শুরু হয়ে যায়। কারণ নজিরবিহীন ভাবে ২০১৬ সালে সিউড়ি আদালতের এই মামলার দায়িত্বে থাকা সরকারি আইনজীবী রঞ্জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আদালতে আবেদন জানান, অভিযুক্তদের মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হোক। সেই সময় থেকেই অভিযোগ উঠেছিল পুলিশ এবং সরকারি আইনজীবী অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন। বর্তমান সরকারি আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন,“ওই সময়ে অমিতের স্ত্রী পুতুল সরকারি আইনজীবীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন। তিনি সেই জেলাশাসককে সরকারি আইনজীবী বদলের আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে ওই মামলায় বিশেষ সরকারি আইনজীবী হিসাবে নিয়োগ করা হয় তুপন গোস্বামীকে।”
মলয়বাবু বলেন, বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন দুই অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছে। একজনের বিচার চলছে জুভেনাইল কোর্টে। একজন জামিন পেয়েছেন। এ দিন সিউড়ি আদালতের অতিরিক্ত বিশেষ বিচারক সোমেশ পাল এই মামলার রায় দেন। মলয়বাবু বলেন,“বিচারক বলেন তিনি ২০ জন সাক্ষীর বয়ান শুনেছেন। সঙ্গে পুলিশের দেওয়া সমস্ত তথ্য প্রমাণ খতিয়ে দেখেছেন। কিন্তু কোনও তথ্য প্রমানই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও জোরাল প্রমান দিতে পারেনি। গোটা তদন্তটাই পুলিশ করেছে দায়সারা ভাবে।” আদালতের রায় শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পুতুল। তিনি বলেন, “সেদিন পুলিশ চাইলে ওকে বাঁচাতে পারত। ওরা চাইলে সব অভিযুক্তরা শাস্তি পেত।”
(পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার খবর এবং বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলায় খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)