Omicron

Omicron: বাংলা আপাতত ওমিক্রন-শূন্য! চিকিৎসকেরা বলছেন, উদ্বেগ থাকুক তবে অযথা আতঙ্ক নয়

রাজ্যের প্রথম ওমিক্রন আক্রান্তের রিপোর্ট নেগেটিভ। বাকি যে দু’জনের ওমিক্রন সন্দেহে জিন পরীক্ষা হয়েছিল, তাঁরাও নয়া রূপে আক্রান্ত নন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ১৬:৪৬
Share:

সচেতনতাই পথ। ফাইল ছবি।

ঘটনা— এক
রাজ্যের প্রথম ওমিক্রন আক্রান্ত, সাত বছরের বালকের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ। জানা গেল বৃহস্পতিবার।

Advertisement

ঘটনা— দুই
বাংলাদেশে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে বারাসত ফেরার সময় পেট্রাপোলে নমুনা পরীক্ষায় এক প্রৌঢ়ের করোনা ধরা পড়ে। বৃহস্পতিবার জানা গেল, জিন পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ওমিক্রন নয়, তিনি ডেল্টা প্লাসে আক্রান্ত। শুক্রবার বেলেঘাটা আইডি থেকে ছাড়া পেতে পারেন।

ঘটনা— তিন
ব্রিটেন ফেরত অষ্টাদশীর করোনা পজিটিভ এলে করা হয় জিন পরীক্ষা। গত মঙ্গলবার জানা যায়, তিনি ডেল্টায় আক্রান্ত, ওমিক্রনে নয়। আপাতত বাড়িতেই নিভৃতবাসে তরুণী।

এই তিনটি খবরের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বলতে হচ্ছে, বাংলা আপাতত ওমিক্রন-শূন্য। চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, উদ্বেগ থাকুক তবে অযথা আতঙ্ক নয়।

Advertisement

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ চিকিৎসক আশিস মান্না বলছেন, ‘‘করোনা নেগেটিভ হওয়ার অর্থ, শরীরে পরীক্ষাগ্রাহ্য সীমার তুলনায় কম ভাইরাসের উপস্থিতি। রিপোর্ট নেগেটিভ মানে কোভিড শূন্য এমনটা একেবারেই নয়। তাই রোগীকে অবশ্যই নিভৃতবাসে থাকতে হবে।’’ একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা ডেল্টা বা ডেল্টা প্লাসের মারণ ক্ষমতা প্রত্যক্ষ করেছি। শুধুমাত্র ওমিক্রন নিয়ে আতঙ্ক বা উদ্বেগ কেন? সামগ্রিক করোনা নিয়েই সচেতন থাকতে হবে। ওমিক্রন যে বেশি ঘাতক, তা এখনও প্রমাণিত নয়। তাই টিকা নেওয়া, মাস্ক পরা, পরিচ্ছন্নতা ও দূরত্ব বিধি মেনে চলতে হবে। একমাত্র তা হলেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতা সম্ভব।’’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুই বলেন, ‘‘ওমিক্রন করোনা ভাইরাসের একটি নতুন রূপ, যা প্রকৃতির নিয়মেই মিউটেশন এর মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এবং খুব সহজে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার ও কোভিড বিধি পালন করতে পারলে শুধু ওমিক্রন কেন, তার থেকেও ভয়ঙ্কর রূপ এলেও তাকে রুখে দেওয়া সম্ভব। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকুন। জোড়া টিকা নিন ও স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশাবলি অক্ষরে অক্ষরে পালন করুন।’’

চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের বক্তব্য, ‘‘ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি হলে আমরা মশারি টাঙাই। উপযুক্ত ব্যবস্থা নিই। তেমনই কোভিড- ১৯ এর ক্ষেত্রেও আমরা ব্যবস্থা নেব। কখনওই আতঙ্কিত হয়ে পড়ব না। সব ভাইরাসের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শেষের দিকে সে আবার শক্তি বাড়িয়ে ফিরে আসে। এ ক্ষেত্রেও তেমন হচ্ছে বলে মনে হয়। এটা হয়তো কোভিডের শেষের শুরু। কিন্তু পাকাপাকি ভাবে কোভিড শেষ না হওয়া পর্যন্ত সচেতন থাকতেই হবে। উদ্বেগ নয়, সচেতন থাকুন, আতঙ্কে নয়।’’

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা দেশের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে একটি বৈঠক করেন। তার পর বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৭০ জন কোভিড আক্রান্ত রয়েছেন।বস্তুত, দুনিয়া জুড়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে করোনার নয়া রূপ ওমিক্রন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) দাবি করেছে, ডেল্টার চেয়েও বেশি ‘সংক্রামক’ ওমিক্রন। অর্থাৎ আরও ‘দ্রুতবেগে’ ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম। নয়া রূপকে হু ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ বলে চিহ্নিত করেছে ইতিমধ্যেই। তবে এর প্রভাব নিয়ে চূড়ান্ত কোনও ঘোষণা এখনও হয়নি। ভারত-সহ একাধিক দেশ আন্তর্জাতিক বিমানে আগত যাত্রীদের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন-সহ অনেক দেশ সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া শুরু করেছে।


কিন্তু নয়া রূপের ভয়াবহতা বা মারণ ক্ষমতা কি ডেল্টার চেয়েও বেশি? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও আমাদের হাতে নেই। কিন্তু নয়া রূপের গতিপ্রকৃতি দেখে প্রাথমিক ভাবে এখনও ডেল্টাকেই বেশি মারণ বলে মনে করছেন গবেষকদের একটি অংশ। আবার অন্য একটি অংশের মতে, শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি, কারণ ওমিক্রন নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য এখনও আমাদের হাতে নেই। স্বাভাবিক নিয়মে করোনার নয়া রূপ ওমিক্রন বাংলাতেও প্রবেশ করেছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে উপরোক্ত তিন-তিন জন করোনা আক্রান্তের জিন পরীক্ষা হয় এই বাংলায়। বর্তমানে কারও শরীরেই ওমিক্রনের অস্তিত্ব নেই। নিঃসন্দেহে এ খবর স্বস্তির। কিন্তু আপাত স্বস্তিই কি আগামীর বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নয়া রূপ এসেছে মানেই তা আগের চেয়ে বেশি মারাত্মক, এমনটা না-ও হতে পারে। গোটাটাই দীর্ঘ গবেষণা সাপেক্ষ। আবার উল্টোটাও ষোলো আনা সত্যি। তা হলে উপায় কী? করোনা বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার কোন রূপ কতটা বিপজ্জনক, স্কেল ফেলে তা মাপা সাধারণের কম্মো নয়। সে কাজ গবেষকদের। তাই সাধারণের জন্য উপায় একটাই, সচেতনতা।

বিশেষজ্ঞরা বার বার বলছেন, ওমিক্রন নিয়ে বাড়তি উদ্বিগ্ন হয়ে বাড়াবাড়ির যেমন প্রয়োজন নেই, তেমনই অসম সাহসী হয়ে মাস্ক পরা ছেড়ে দেওয়া কিংবা শারীরিক দূরত্বের নীতি ভোলাও নৈব নৈব চ। করোনার প্রথম দিন থেকে যে সমস্ত নিয়ম পালন করা হয়েছে, ওমিক্রন রুখতেও তা-ই এখনও পর্যন্ত নির্বিকল্প। ফলে আপাত স্বস্তিকে স্থায়ীত্ব দেওয়ার ভারও কিন্তু আমাদেরই হাতে। অতএব, আতঙ্ক নয়, সচেতন থাকাই প্রেসক্রিপশন!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement