দিল্লিতে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের পর অজয় এডওয়ার্ড৷ —নিজস্ব চিত্র।
সমাজমাধ্যমে তাঁর পোস্টে আগেই ইঙ্গিত মিলেছিল। মঙ্গলবার সকালে দিল্লিতে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপালের সঙ্গে বৈঠক করে হামরো পার্টির অজয় এডওয়ার্ড বুঝিয়ে দিলেন, লোকসভা ভোটের আগে তিনি কোন দিকে পা রাখতে চলেছেন। শুধু অজয়ই নন, এ দিন রাহুলদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিজেপির জোটসঙ্গী জিএনএলএফের সাধারণ সম্পাদক মহেন্দ্র ছেত্রীও। সে বৈঠকে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং পাহাড়ে কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিনয় তামাংও ছিলেন। সূত্রের খবর, পাহাড় পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয় দুই বৈঠকেই। দুই নেতাই পাহাড়-সমস্যা মেটাতে কংগ্রেসকে ভরসা করে আগামী দিনে এক সঙ্গে চলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড় পরিস্থিতি নিয়ে রাহুলের সঙ্গে অধীর-বিনয়ের আলাদা বৈঠকও হয়। বৈঠকের পরে অজয় জানিয়ে দেন, ‘মিথ্যে প্রতিশ্রুতির’ রাজনীতি তাঁরা আর মানবেন না।
সূত্রের খবর, সোমবার রাতে দিল্লিতে পৌঁছন অজয়েরা। এ দিন ভোরে অজয়ের বাবা মারা যান। সে খবর পাওয়ার পরেও তিনি রাহুলের সঙ্গে দেখা করেই পাহাড়ে ফেরেন। অজয় বলেন, ‘‘বাবার চলে যাওয়াটা আমার কাছে বিরাট ক্ষতি। তবে আমি গোর্খা জাতির কাছেও দায়বদ্ধ। তাই কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক সেরে ফিরেছি।’’ ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর প্রধান তথা পাহাড়ের শাসক দল প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি অনীত থাপা এখনই নতুন সমীকরণ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে অজয়ের বাবার মৃত্যুতে শোক-বার্তা দিয়ে পাশে থাকার কথা বলেছেন অনীত। মন্তব্য করেননি দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা-সহ পাহাড়ের নেতারাও।
তবে মহেন্দ্র ছেত্রীর সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বের বৈঠক ঘিরে পাহাড়ে জিএনএলএফে কোন্দল শুরু হয়েছে। বৈঠকের পরে দলের মহেন্দ্র ছেত্রী বলেছেন, ‘‘পাবর্ত্য পরিষদ থেকে জিটিএ— সবই কংগ্রেস সরকারের হাতে তৈরি। পাহাড়ের মানুষের মনোভাব, সহানুভূতি কংগ্রেস বুঝবে। মিথ্যা আশ্বাস, বিশ্বাসকে লুট করার দলে আমরা নেই।’’ কিন্তু রাতে জিএনএলএফের সেক্রেটারি জেনারেল তথা বিজেপি বিধায়ক নীরজ জিম্বা দাবি করেন, মহেন্দ্র ব্যক্তিগত ভাবে দিল্লিতে গিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দলের সভাপতি মন ঘিসিং এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যেরা বিষয়টি জানতেন না। দলের প্যাডও ব্যবহার করা হয়েছে। নীরজের কথায়, ‘‘জিএনএলএফ এনডিএ-র শরিক। আগামীতে কোনও বদল হলে, তা সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা কংগ্রেস নেতৃত্বকেও বিষয়টি বলব। জিএনএলএফের নাম করে এমন কাজ চলবে না। মহেন্দ্র ছেত্রীর বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে।’’
যদিও পাহাড়ের একটি সূত্র বলছে, পুরনো দল জিএনএলএফে অজয়ের যোগাযোগ ভালই। শুধু মহেন্দ্র নন, মনের দলের আরও কেউ কেউ তাঁর সঙ্গী হতেই পারেন। নীরজ প্রসঙ্গে দলের একটি সূত্রের মত, দার্জিলিং বিধানসভা আসনটি ঘিরেই তাঁর সঙ্গে অজয়ের মনোমালিন্য এবং অজয়ের দলত্যাগ। দলের সর্বোচ্চ নেতা হওয়া সত্ত্বেও মন ঘিসিং যে ভাবে হাত গুটিয়ে থাকেন এবং যাবতীয় বিষয়ে নীরজই এগিয়ে এসে কথা বলেন, সেটা দলের অনেকের না-পসন্দ। তাই গত পাঁচ বছর ধরে জিএনএলএফ ও বিজেপির যে জোট রয়েছে, আগামী লোকসভা ভোটের আগে তাতে নতুন করে ভাঙন অস্বাভাবিক নয় বলেই দলের একাংশের মত।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুং কী করেন, তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে অনেকের।
দার্জিলিং জেলার কংগ্রেস নেতাদের একাংশ মনে করছে, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক হিসাবে শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের সঙ্গে তাঁদের দলের কিছু আসন-রফা হলে, সেগুলির মধ্যে একটি দার্জিলিং হতে পারে। রফা না হলে কংগ্রেস অজয়, মন ঘিসিংদের পাশে নিয়ে লড়তে চায়। সদ্য কংগ্রেসে যোগ দেওয়া বিনয় তামাং বলেন, ‘‘পাহাড়কে সমৃদ্ধ করতে পারে কংগ্রেস সরকারই। সবাই তা বুঝে, সে পথেই হাঁটছেন। আরও অনেকে আমাদের পাশে নিশ্চয়ই আসবেন।’’