মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিমানমন্ত্রী অশোক গজপতি রাজু। বৃহস্পতিবার নবান্নে নিজস্ব চিত্র।
বহু বছর আগে কলকাতা থেকে নিয়মিত লন্ডনের উড়ান চালাত এয়ার ইন্ডিয়া। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। আবার সেই এয়ার ইন্ডিয়াকেই কলকাতা থেকে লন্ডন-সহ ইউরোপে সরাসরি উড়ান চালাতে বলা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিমানমন্ত্রী অশোক গজপতি রাজু। বৃহস্পতিবার তিনি কলকাতায় জানান, কলকাতা থেকে পুনরায় উড়ান চালানোর জন্য এয়ার ইন্ডিয়া ছাড়াও ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ আর লুফৎহানসাকে অনুরোধ করা হবে।
এ দিন কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিমানমন্ত্রী। তার পরে তিনি জানান, ইউরোপের সঙ্গে আবার কলকাতার সরাসরি বিমান-যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য এয়ার ইন্ডিয়াকেই বেছে নেওয়া হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি দিল্লি গিয়েই এয়ার ইন্ডিয়াকে বলব। তবে আমি বললেই তো হবে না। এই মুহূর্তে এয়ার ইন্ডিয়ার পক্ষে কলকাতা থেকে ওই উড়ান চালানো সম্ভব কি না, তা তারা অবশ্যই খতিয়ে দেখবে। তার পরে সিদ্ধান্ত নেবে।’’
কলকাতা থেকে ইউরোপের সরাসরি বিমান-যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে বারবার। আবার তা ছিন্নও হয়ে গিয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়াই একাধিক বার তা চালু এবং বন্ধ করেছে। দীর্ঘ কাল আগে কলকাতা-লন্ডন নিয়মিত উড়ান চালিয়ে শেষ পর্যন্ত সেটি তুলে নেয় তারা। ২০০৫ সালে তারা আবার ওই রুটে সরাসরি উড়ান চালাতে শুরু করে। কিন্তু মাত্র দু’বছর চালানোর পরে তা আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। যুক্তি দেখানো হয়, কলকাতা থেকে নিয়মিত যাত্রী হচ্ছে না। তার পরে কলকাতা থেকে ইউরোপের সরাসরি উড়ান বলতে ছিল ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের লন্ডন উড়ান আর লুফৎহানসার ফ্রাঙ্কফুর্ট উড়ান। কিন্তু ২০১০ এবং ২০১১— পরপর দু’বছর ওই দু’টি বিদেশি সংস্থাও কলকাতা থেকে উড়ান তুলে নেয়। ইকনমি শ্রেণিতে নিয়মিত যাত্রী হলেও বিজনেস বা ফার্স্ট ক্লাসের মতো উচ্চ শ্রেণির আসনে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এই যুক্তি দেখিয়েই কলকাতা ছাড়ে তারা।
তার পর থেকে মমতা বহু বার কলকাতা থেকে সরাসরি ইউরোপে উড়ান চালানোর প্রসঙ্গ তুলেছেন। অজিত সিংহ যখন বিমানমন্ত্রী ছিলেন, তখনও তিনি কলকাতায় এসে মমতার সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁকেও একই অনুরোধ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশ্ন উঠেছিল, রাজ্যে শিল্প-পরিস্থিতির উন্নতি না-হলে, বড় বড় সংস্থা এসে এখানে দফতর না-খুললে কি বিমানে উচ্চ শ্রেণির পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া যাবে? কলকাতা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে এখানে পুনরায় উড়ান চালু করার প্রসঙ্গে মূলত এই প্রশ্নটাই বারবার তুলে ধরছেন বিভিন্ন বিদেশি বিমান সংস্থার প্রতিনিধিরা। অভিযোগ, উচ্চ শ্রেণির যাত্রী বিশেষ মেলে না বলেই এই শহরে নতুন উড়ান চালু করার কথা উঠলে হংকংয়ের প্রধান বিমান সংস্থা ক্যাথে প্যাসিফিক আগ্রহ দেখায় না। তার জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় সস্তার ড্রাগন এয়ারকে। সব প্রধান বিদেশি বিমান সংস্থা মুম্বই আর দিল্লি থেকে উড়ান চালালেও কলকাতা থেকে চালায় না। একমাত্র ব্যতিক্রম এমিরেটস। তারা এখন এই মহানগর থেকে সপ্তাহে ১৩টি উড়ান চালাচ্ছে।
এমিরেটস পারলে অন্যান্য বিমান সংস্থা কলকাতা-ইউরোপ উড়ান চালাচ্ছে না কেন? বিমানমন্ত্রী গজপতির মন্তব্য, ‘‘এটা অনেকটা ‘আগে মুরগি না আগে ডিম’-এর মতো সমস্যা। অনেকে বলছেন, বিদেশি উড়ান চালু হলে এমনিতেই যাত্রী হবে। তার জন্য বিশ্ব মানের টার্মিনাল বানানো হয়েছে কলকাতায়। আবার অনেকে বলছেন, যাত্রী না-হলে উড়ান চালাবেন না।’’ তাঁর আশ্বাস, এয়ার ইন্ডিয়া তো বটেই, সেই সঙ্গে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও লুফৎহানসাকে কলকাতা থেকে পুনরায় ইউরোপ উড়ান চালাতে বলা হবে। এ দিনের বৈঠকে দেশি ও বিদেশি বিমান সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। জেট এয়ারওয়েজের প্রতিনিধিরা বৈঠকে সরাসরি বলেন, ‘‘কলকাতা থেকে ইউরোপের মতো এত বড় রুটে উড়ান চালানোর আগে সেটা আর্থিক ভাবে লাভজনক হবে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।’’
এ দিনের বৈঠকে বিমানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আর কে শ্রীবাস্তব। সেখানে রাজ্যের সব বিমানবন্দর নিয়েই আলোচনা হয়। পরে মমতা জানান, মালদহে বিমানবন্দর তৈরির ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। পূর্ত দফতর বালুরঘাটে বিমানবন্দর তৈরির কাজ শুরু করেছে। ‘‘বাগডোগরায় রাতে বিমান ওঠানামার সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন বিমান সংস্থাকে অনুরোধ করেছি। কোচবিহারে রানওয়ে বাড়ানোর কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার জন্য অনুরোধ করেছি বিমানমন্ত্রীকে,’’ বললেন মমতা। বিমানমন্ত্রী জানান, কোচবিহার দেশের ৩১টি অকেজো বিমানবন্দরের অন্যতম। কিছু দিন আগেও সেখানে বিমান ওঠানামা করছিল। এখন রানওয়ে বাড়ানোর জন্য বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়েছে। সংস্কারের কাজ শীঘ্রই শেষ হবে।