AICC General Secretary

Bhabanipur Bypoll: ভবানীপুরে লড়ব না, জানাল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড

বঙ্গ কংগ্রেসের মত অগ্রাহ্য করে এআইসিসি তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে লড়তে না চাওয়ায় সেই সিদ্ধান্তকে ‘ইতিবাচক’ বলেই আখ্যা দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:০৩
Share:

সনিয়া গাঁধী ও অধীর চৌধুরী ফাইল চিত্র।

মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মোড় ঘুরে গেল কংগ্রেসে। বৃহত্তর জোটের অঙ্ক কষে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। কংগ্রেস না দিলেও সিপিএম অবশ্য ভবানীপুরে প্রার্থী দেবে। দিল্লির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার রাতে জানার পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী জানিয়েছেন, ভবানীপুরে তাঁরা প্রচারই করবেন না। দলের হাইকম্যান্ডের সিদ্ধান্তে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব ‘বিভ্রান্ত ও হতাশ’। তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য এআইসিসি-র অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে।

Advertisement

ভবানীপুর নিয়ে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এখন প্রায় সসেমিরা দশা অধীরবাবুর! মাসদুয়েক আগে তিনিই প্রথমে বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে উপনির্বাচনে তাঁরা প্রার্থী দিতে চান না। তবে সেটা তাঁর ‘ব্যক্তিগত মত’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন। মাঝের সময়ে কংগ্রেস থেকে সুস্মিতা দেবের মতো নেত্রীকে দলে নিয়েছে তৃণমূল। মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস কর্মীদের বাড়িতে শাসক দলের হামলার অভিযোগ উঠেছে, আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে মারমুখী শাসক দলের সমর্থকদের আক্রোশের মুখে পড়েছেন খোদ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। এ সবের প্রেক্ষিতেই সোমবার প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মত ছিল, ভবানীপুরে প্রার্থী দেওয়া হোক। কিন্তু পরের দিনই সেই প্রস্তাবে জল ঢেলে দিয়েছে এআইসিসি। তারা বুঝিয়ে দিয়েছে, রাজ্যে যা-ই হোক, জাতীয় স্তরে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মমতার সঙ্গে বোঝাপড়া রেখে চলার বার্তা দেওয়া তাদের কাছে বেশি জরুরি।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, ভবানীপুরে প্রার্থী না দেওয়ার অবস্থান নেওয়ার জন্য দলের বিক্ষুব্ধ ‘জি-২৩’ গোষ্ঠীর চাপ কাজ করেছে। আর একটি সূত্রের মতে, দিল্লিতে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে মমতা যখন দেখা করেছিলেন, তখনই এই বিষয়ে প্রাথমিক কথা হয়ে গিয়েছিল। আনুষ্ঠানিক ভাবে এ দিন এআইসিসি-র সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই দিল্লিতে তৃণমূল নেতৃত্বকে প্রয়োজনীয় বার্তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

প্রার্থী না দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পিছনে দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের যুক্তিকেই এ দিন সামনে রেখেছেন অধীরবাবু। রাতে বহরমপুরে তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের সকলের মত বিস্তারিত ভাবে পাঠানোর পরে এআইসিসি-র তরফে জানানো হয়েছে, উপনির্বাচনে কংগ্রেস ভবানীপুরে প্রার্থী দেবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কংগ্রেস লড়বে নায় কারণ, জাতীয় কংগ্রেসের বক্তব্য, বিজেপিকে কোনও ভাবেই সহযোগিতা করার ব্যবস্থা করা যাবে না।’’ কিন্তু ভবানীপুরে বামেরা প্রার্থী দেবে। বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট এখনও ভাঙার ঘোষণা হয়নি। তা হলে সেখানে কংগ্রেস কী করবে? দৃশ্যতই বিড়ম্বনা সামাল দিয়ে প্রদেশ সভাপতি বলেন, ‘‘ভবানীপুরে কংগ্রেস প্রচার করবে না।’’ মুর্শিদাবাদের দুই কেন্দ্র জঙ্গিপুর ও শমসেরগঞ্জে আবার বামেদের সমর্থন করার কথা আগেই বলেছে কংগ্রেস। ওই দুই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী নেই। ফলে, একই রাজ্যের মধ্যে মুর্শিদাবাদ ও কলকাতা, দুই জেলায় কংগ্রেসের দু’রকম অবস্থান হতে চলেছে!

বঙ্গ কংগ্রেসের মত অগ্রাহ্য করে এআইসিসি তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে লড়তে না চাওয়ায় সেই সিদ্ধান্তকে ‘ইতিবাচক’ বলেই আখ্যা দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মমতা নিজের শক্তিতেই জিতবেন। তবু তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করলে তা ঘুরপথে সাম্প্রদায়িক শক্তির পাশে দাঁড়ানো হত। বিধানসভা ভোটের ভুল শুধরে কংগ্রেস এই সিদ্ধান্ত নিলে তা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে ইতিবাচক ভাবনা।’’

সিপিএম অবশ্য মনে করছে, ভবানীপুরে প্রার্থী না দিলেই বরং তৃণমূল-বিরোধী ভোটকে বিজেপির দিকে ঠেলে দেওয়া হবে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘কংগ্রেস প্রার্থী দেবে কি না, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। কিন্তু যে মানুষ তৃণমূলকে সমর্থন করতে চান না, তাঁদের কাছে বিজেপি ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না— এটা কী ভাবে হতে পারে? কংগ্রেস না লড়লে বামেরা সেখানে লড়বে এবং বিজেপি ও তৃণমূল-বিরোধী সব মানুষের সমর্থন চাইবে।’’ আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে এ দিনই বামফ্রন্টের বৈঠকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয়েছে, কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত না লড়লে ভবানীপুরে সিপিএম প্রার্থী দেবে। কলকাতা জেলা সিপিএমকে প্রার্থী বাছাই করতেও বলা হয়েছে। সংযুক্ত মোর্চার হয়ে কোনও নির্বাচন বা কর্মসূচিতে তাঁরা থাকবেন না জানিয়ে রাগ করে বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসেন ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায়েরা।

ভবানীপুরের লড়াই থেকে দিল্লি সরে দাঁড়াতে বলায় রাজ্য কংগ্রেসের বড় অংশই ‘হতাশ’। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘দলের লাইন বলেই কিছু ঠিক হচ্ছে না। কাকে সমর্থন করব, কোথায় প্রত্যাহার করব— এ সবের আগে তো দলের লাইন ঠিক হতে হবে!’’ বর্যীয়ান আর এক নেতা বলছেন, ‘‘ইডি যখন প্রথম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করল, এআইসিসি তাঁর পক্ষে দাঁড়িয়ে টুইট করেছিল। সেই অভিষেক দিল্লিতে দাঁড়িয়ে বলে এলেন, কংগ্রেস নাকি বিজেপির লাগানো তদন্ত সংস্থার ভয়ে ঘরে ঢুকে গিয়েছে! তার পরেও এআইসিসি চাইছে তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী না দিতে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement