কংগ্রেস সভানেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।
পশ্চিমবঙ্গে ১১০ থেকে ১১৬টি আসন দাবির মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসকে বামেদের সঙ্গে বিধানসভায় জোট চূড়ান্ত করতে নির্দেশ দিল কংগ্রেস হাইকমান্ড। কারণ, সিপিএম তথা বামেদের সঙ্গে জোট গঠনে কোনও গড়িমসি চায় না এআইসিসি। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে জাতীয় রাজনীতির কথা মাথায় রেখেই জোট চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এআইসিসি।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার দিল্লি থেকে বাংলায় বামেদের সঙ্গে জোট ‘চূড়ান্ত’ বলে ঘোষণা করে কংগ্রেস হাইকমান্ড। কিন্তু আসন ভাগাভাগি নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। তার মধ্যেই প্রদেশ কংগ্রেসের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী দাবি করে, অধীর চৌধুরিকে জোটের ‘মুখ’ (অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী) করে কংগ্রেসকে কমপক্ষে ১৪০টি আসন ছাড়তে হবে বামেদের। বিষয়টি নিয়ে এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্য সংগঠনের পর্যবেক্ষক জিতিন প্রসাদের কাছে আগেই দাবি জানিয়েছিল কংগ্রেসের ওই গোষ্ঠী। ফলস্বরূপ রাজ্যের এক প্রবীণ কংগ্রেস নেতার সঙ্গে দু্’বার কথা হয় এআইসিসি-র এক প্রভাবশালী নেতার। অধীরকে ‘জোটের মুখ’ করা থেকে শুরু করে কংগ্রেসের পক্ষে ১৪০টি আসন আদৌ দাবি করা যায় কিনা, সে বিষয়েও জানতে চান ওই শীর্ষনেতা। সূত্রের খবর, রাজ্যের ওই প্রবীণ নেতার সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার সঙ্গেও আলোচনা হয় কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্বের। তারপরেই জোট চূড়ান্ত বলে ঘোষণা করা হয়।
দিল্লি থেকে জোট চূড়ান্ত বলে ঘোষণা করা থেকেই স্পষ্ট, কংগ্রেস হাইকমান্ড কোনওমতেই চাইছে না, রাজ্যনেতাদের ‘অবিমৃশ্যকারিতা’র জন্য জন্য জোটের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাহত হয়। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বা বেশিসংখ্যক আসনের দাবি— দু’টি বিষয়ে ‘অনড়’ মনোভাব দেখালে জোট ভেস্তে যেতে পারে। সেই জন্যই প্রদেশ কত আসন চাইতে পারে, তার সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দিয়েছে ২৪ আকবর রোড।
বিধান ভবনের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বেশি আসনের দাবি প্রসঙ্গে আগেই সতর্ক করেছিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। তিনি বলেছিলেন, ‘‘জোট যখন এআইসিসি চূড়ান্ত করেছে, তখন বাকি বিষয়গুলিও তাদের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। কারণ, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তত্কালীন এআইসিসি সভাপতি রাহুল গাধীঁ স্বয়ং জোটের রফা করে দেওয়া সত্ত্বেও রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ আসন নিয়ে জেদাজেদির জেরে শেষমেষ জোট ভেঙে গিয়েছিল। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার জোট গঠনে অনেক বেশি সাবধানী এআইসিসি। ফলে রাজ্য নেতৃত্বের ১৪০-১৫০টি আসনের দাবিকে আমাল জিতে চাইছে না তারা। তাই প্রদেশ কংগ্রেসকে ১১০ থেকে ১১৬টি আসনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে বলা হয়েছে। অধীরকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার দাবি প্রসঙ্গেও মৌনই রয়েছে এআইসিসি।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ঘোষিতভাবে বাম-কংগ্রেস জোট হলেও ২৪টি আসনে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছিল দু’দল। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না এআইসিসি। তাই রাজ্যনেতৃত্বকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জেলাভিত্তিক আসনের দাবির তালিকা যেন দ্রুততার সঙ্গে দিল্লিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যে সমস্ত বিষয়গুলি এআইসিসি জানতে চেয়েছে, তা আমরা যথাসময়ে লিখিত ভাবে পাঠিয়ে দেব।’’
তবে আসনের দাবি সংক্রান্ত এআইসিসি-র নির্দেশ বঙ্গ কংগ্রেস মানবে কি না, তা নিয়ে বিধান ভবনের অন্দরেই জল্পনা রয়েছে। তবে এক প্রথমসারির নেতার কথায়, ‘‘এআইসিসি এ বার জোটের রাশ নিজের হাতেই রাখতে চাইছে। ঘটনাপ্রবাহ থেকেই সেটা স্পষ্ট। তাই মনে হয় না রাজ্য কংগ্রেসের তরফে কোনও অতিরিক্ত উৎসাহ দেখানো হবে। এটাও মনে রাখতে হবে যে, অধীর চৌধুরী এখন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা। ফলে, তিনিও এখন হাইকমান্ডের অংশ। তাই মনে হয় না, তাঁর রাজ্য-অনুগামীরা কোনও ‘অবাস্তব’ দাবি নিয়ে জোরাজুরি করবে। সিপিএমের সঙ্গে জোট সময়ের দাবি। সেটা না মানলে কংগ্রেসের অস্তিত্ব আরও বিপন্ন হবে।’’