ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যাচ্ছে মধ্যবিত্ত

ফুলের এমন অগ্নিমূল্যের জন্য প্রকৃতির খামখেয়ালি আচরণকেই দুষছেন সাধারণ চাষি থেকে ফুল ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, গত বছরের জুন-জুলাই মাসে অতিবৃষ্টির জেরে ফুল চাষের প্রভূত ক্ষতি হয়েছিল।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৫
Share:

সরস্বতী পুজোর প্রস্তুতি সারা। স্কুলে এসে গেল প্রতিমাও। শনিবার, শহরের এক স্কুলে। ছবি: শৌভিক দে

‘লেগেছে লেগেছে, আগুন...!’

Advertisement

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে যে আগুন লেগেছিল, তা নিভল না এখনও। নতুন বছরের হাড় কাঁপানো শীতেও তার তেজ কমার কোনও লক্ষণ নেই।

শহর থেকে শহরতলি— সেই আগুনেই পুড়ে যাচ্ছে ফুলের বাজার। ছেঁকা লাগছে আমজনতার গায়ে। দু’দিন পরেই সোমবার সরস্বতী পুজো। তার আগে ফুলের বাজারে গিয়ে মাথায় হাত মধ্যবিত্তের। দাম এখনও এতটাই চড়া।

Advertisement

ফুলের এমন অগ্নিমূল্যের জন্য প্রকৃতির খামখেয়ালি আচরণকেই দুষছেন সাধারণ চাষি থেকে ফুল ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, গত বছরের জুন-জুলাই মাসে অতিবৃষ্টির জেরে ফুল চাষের প্রভূত ক্ষতি হয়েছিল। জমিতে জল জমে নষ্ট হয়েছিল ফলন। বর্ষার মরসুম কাটার পরে ফুলচাষিরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা করলেও বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। নিম্নচাপের কারণে পরবর্তী কয়েক মাসেও (নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত) মাঝেমধ্যেই হয়েছে বৃষ্টি। তাই বর্ষার পরে ফের নতুন করে দোপাটি, গাঁদার চাষ করেও তেমন লাভ হয়নি। জল জমে পচন ধরেছে গাছের গোড়ায়।

বৃষ্টির পাশাপাশি প্রবল ঠান্ডাও রজনীগন্ধা চাষের ক্ষতি করেছে। এমনটাই জানাচ্ছেন সারা বাংলা ফুল চাষী ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েক। কিন্তু ঠান্ডা তো প্রতি বছরই থাকে? নারায়ণবাবু বলেন, ‘‘এ বার নিম্নচাপের সঙ্গেই এসেছে শীত। সেই জোড়া ফলায় বিদ্ধ হয়েছে ফুল চাষ। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকাতেও সমস্যা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, আবহাওয়া বিরূপ হওয়ার ফলেই রজনীগন্ধার কুঁড়ি থেকে ফুল ফুটছে না। আবার ফুটলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। তাড়াতাড়ি ঝরে যাচ্ছে। পাইকারি ফুল ব্যবসায়ীদের কথায়, ‘‘পাইকারি বাজারে দাম বেশি থাকায় এ বার খুচরো বাজারে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম হাঁকবেন।’’

পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়ার একাংশ, উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়াতেই মূলত দোপাটি, রজনীগন্ধা এবং গাঁদার চাষ হয়। গত বছর সরস্বতী পুজোর সময়ে যে দোপাটি এবং কুচো ফুল পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছিল ৪০ টাকা প্রতি কেজি দরে, সেটাই এ বছর বিকোচ্ছে ১০০ টাকায়। খুচরো বাজারে তা ১২০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করবে। বাসন্তী (হলুদ) রঙের তিন ফুটের এক-একটি গাঁদার মালা বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। আর তিন ফুটের লালচে গাঁদার মালা বিকোচ্ছে ১৫ টাকায়। গত বছর কিংবা বছরের অন্য সময়ে এই দু’রকমের মালাই বিক্রি হয় ৮-১০ টাকায়। অন্য সময়ে যেখানে ৪০-৫০ টাকায় এক কেজি লালচে গাঁদা ফুল পাওয়া যায়, তারই দাম এখন ৭০ টাকা। হলুদ গাঁদা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। অন্য সময়ে যার দাম থাকে ৩০-৪০ টাকা। রজনীগন্ধার দাম এখন প্রতি কেজি ১৫০ টাকা।

তবে ব্যবসায়ীদের মতে, কুচো ফুল থেকে মালার দাম যতই আকাশছোঁয়া হোক, আজ, শনিবার ও কাল, রবিবার ফুলের বাজার কিন্তু জমজমাটই থাকবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement