বাঘ দিবস উপলক্ষে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। নিজস্ব চিত্র।
বছরভর প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পৃথিবীর এক মাত্র ম্যানগ্রোভ ব্যাঘ্রভূমির বাসিন্দাদের রক্ষা করেন তাঁরা। বিশ্ব বাঘ দিবস উপলক্ষ্যে সুন্দরবনের সেই বনকর্মীদের সম্মাননা জানাল শহরের বন্যপ্রাণপ্রেমী সংস্থা ‘শের’।
কলকাতার বিএসএস স্কুলে বাঘ দিবসকে সামনে রেখে একটি অনুষ্ঠানে সম্মানিত করা হয় সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা দক্ষিণ ফরেস্ট ডিভিশনের থেকে মোট ৮টি রেঞ্জ থেকে আসা ৬০ জন বনকর্মীকে। বাঘ সংরক্ষণে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই ছিল ওই আয়োজন।
২০১৮ সাল থেকে ‘শের’ প্রয়াত প্রকৃতিবিদ, অধ্যাপক রতনলাল ব্রহ্মচারী স্মৃতি স্মারক সম্মান শুরু করেছিল। এ বার সেই সঙ্গেই বনকর্মীদের সম্মাননা জানাতে শুরু হয়েছে জাতীয় বাঘ সংরক্ষণ কর্মসূচির প্রয়াত প্রধান প্রশান্ত কুমার সেনের (যিনি পিকে সেন নামেই পরিচিত) নামাঙ্কিত পুরস্কার প্রদান। বিহার ক্যাডারের আইএফএস অফিসার পিকে সেন ‘প্রোজেক্ট টাইগার’ প্রকল্পের কর্ণধার ছিলেন। ২০২১ সালের মে মাসে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান।
আয়োজন সংস্থার প্রধান তথা রাজ্য বন্যপ্রাণ উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য জয়দীপ কুণ্ডু জানিয়েছেন, বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে পিকে সেন এবং রতনলাল ব্রহ্মচারীর স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতেই এই প্রয়াস । তাই তাঁরা বেছে নিয়েছেন সমাজের এমন কিছু মানুষ ও সংস্থাকে, প্রকৃতি, পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ রক্ষায় যাঁদেরপ ভূমিকা রয়েছে। বন দফতরের প্রাক্তন আধিকারিক সুব্রত পাল চৌধুরী, বিপ্লবকুমার ভৌমিক, সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলরতন গুহের পাশাপাশি হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চ এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ ছিল এবারের পিকে সেন এর নামাঙ্কিত স্মারকের প্রাপক।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্য বনপাল বন্যপ্রাণ দেবল রায়, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধিকর্তা তাপস দাস, উপ-অধিকর্তা জোন্স জাস্টিন, সহ-অধিকর্তা সৌমেন মণ্ডল, সুন্দরবন জীব পরিমণ্ডলের যুগ্ম অধিকর্তা অজয় দাস-সহ বন দফতরের আধিকারিকরা।
প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বাঘ দিবসের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বক্তৃতা করেন চলচ্চিত্র পরিচালক অরিন্দম শীল। পদ্মশ্রী পিকে সেনকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন অভিনেতা ও বন্যপ্রাণপ্রেমী সব্যসাচী চক্রবর্তী। উপস্থিত ছিলেন শ্রী পিকে সেনের কন্যা শ্রীমতী রিচা প্রশান্ত। অনুষ্ঠানে বন্যপ্রাণ ও মানুষের সহাবস্থান নিয়ে একটি বিশেষ ‘মোশন পোস্টার’ উদ্বোধন করেন বিধায়ক ও চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তী।
শেরের পক্ষ থেকে একটি শিক্ষামূলক পোস্টার উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের ভিজিল্যান্স কমিশনার ও অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য বনপাল প্রদীপ ব্যাস। পশ্চিমবঙ্গের কৃষি-জীববৈচিত্র সম্পর্কিত পোস্টার প্রাণিবিদ তথা কলেজ শিক্ষক অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায় কলকাতার ৩২টি স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেন। অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বন্যপ্রাণ আলোকচিত্রী শিভাং মেহতার কলকাতায় প্রথম ছবির উপস্থাপনা। বিষয়, ‘ভারতের বনবিড়াল প্রজাতি’। প্রদর্শিত হয় বিএসএস স্কুলের পড়ুয়াদের অভিনীত নৃত্যনাটিকা ‘বাঘ’।