এসেছে ঘাস কাটার যন্ত্র। শনিবার। ছবি: দীপঙ্কর দে।
গোড়ায় চাষিদের সব্জি-চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, তাঁরা মনে করছেন, এক দশক ধরে কোনও চাষ না হওয়ায় ওই জমির উর্বরতা বেড়েছে। তাই ধান নয়, চটজলটি সব্জি চাষ করলে চাষিরা দ্রুত উপার্জন শুরু করতে পারবেন।
সিঙ্গুর নিয়ে শীর্ষ আদালত রায় দেওয়ার পরেই ওই জমিতে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ চালিয়েছিল কৃষি দফতর। কী ভাবে বোঝা গেল ওই জমির উর্বরতা বেড়েছে?
কৃষিবিজ্ঞানী তথা রাজ্য কৃষি দফতরের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত অধিকর্তা (গবেষণা) প্রদীপ সেনের ব্যাখ্যা, দশ বছর ধরে ওই জমিতে ঘাস, আগাছা জন্ম নিয়েছে। তার পর তা পচে গিয়ে মাটির সঙ্গে মিশে জৈব কার্বনের পরিমাণ অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে, যা উর্বরতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। জমির জল ধরে রাখার ক্ষমতাও বেড়েছে। প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘এখন যেমন বৃষ্টি হচ্ছে, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বাতাসের নাইট্রোজেন মাটিতে মিশে গিয়ে অ্যামোনিয়া তৈরি হচ্ছে। যা কি না গাছের পুষ্টির অন্যতম উপাদান। এই প্রক্রিয়া টানা দশ বছর নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চলেছে।’’
রাজ্য সরকার ওই জমিকে চাষযোগ্য করতে কোমর বেঁধে নেমেছে। শুরুতে সেই জমিতে যাতে দ্রুত ফসল ফলানো যায়, তাই প্রথম বার কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক দেবে রাজ্য সরকার। নবান্নের এক কর্তা জানিয়েছেন, ‘জমি ফেরত পেয়ে চাষ শুরু করতে কৃষকদের তেমন খরচ হবে না। শনিবার কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, ‘‘ফেরত পাওয়া জমিতে কৃষকদের চাষে উৎসাহ দেওয়াটা জরুরি। এক দশকেরও বেশি সময় তাঁরা সেখানে চাষ করতে পারেননি।’’
তবে, ২০০৮ সালের পুজোর মুখে টাটারা সিঙ্গুর থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়ার পরে ওই জমিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে ধান চাষ শুরু করে দেন গ্রামবাসীরা। কৃষি-বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এখন যা অবস্থা তাতে সিঙ্গুরের প্রায় হাজার একর জমির মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশে দ্রুত চাষ শুরু করা সম্ভব। কারণ, সেখানে কোনও কংক্রিট বা লোহার কাঠামো তৈরি হয়নি। ফ্লাইঅ্যাশ বা বালিও ফেলা হয়নি। তাঁদের বক্তব্য, অধিগ্রহণের আগে ওই জমিতে বেশি ফসল ফলানোর জন্য যথেচ্ছ রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হতো।
এর ফলে সেখানে জমির উর্বরতা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়। কিন্তু গত দশ বছর জমির অর্ধেকেরও বেশি ওই অংশে কোনও কাজ হয়নি। তাই আবার উর্বরতা ফিরে পেয়েছে সেই জমি। বরং আরও বেশি ফলনশীল হয়ে উঠেছে। কৃষিমন্ত্রী জানান, ওই জমিতে থাকা একটি বিশাল কৃত্রিম জলাধার মাটি দিয়ে বুজিয়ে তার উপর চাষ করা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘ঘাস, আগাছা সাফ করতে যে ক’দিন সময় লাগবে। তার পর দ্রুত জমির অর্ধেকের বেশি জায়গায় ফের চাষ শুরু হয়ে যাবে।
কিন্তু শুরুতে সব্জি চাষে
জোর কেন?
কৃষি ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘আমন ধান চাষের পক্ষে এখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। সে দিক থেকে এখন চাষের জন্য সব্জিই সুবিধাজনক। মরসুমি সব্জিই চাষ করা ভাল। সব্জির বাজারও সব সময়ে তৈরি।’’ কৃষিবিজ্ঞানী প্রদীপ সেনের বক্তব্য, ‘‘সব্জি ফলবে দেড়-দু’মাসের মধ্যে। তার পর সেটা বিক্রি করে কৃষকের হাতে যে টাকা আসবে,
সেটা দিয়ে ধীরে ধীরে তাঁরা ধান চাষে ফিরে যেতে পারবেন। আগে যেমন হতো।’’ বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ধরণীধর পাত্রও মনে করেন, এখন ওই জমিতে সব্জি চাষই কৃষকদের পক্ষে সব চেয়ে উপযোগী।