Domkal

নামে পুরসভা, বন্ধ হল কৃষিঋণ ভর্তুকি

ডোমকলের সহ-কৃষি অধিকর্তা পুলক দে বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সরকারি নিয়ম মেনে পুর-এলাকার কৃষিজীবী মানুষকে বীজ দেওয়া হবে না।’’

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

ডোমকল শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৫৮
Share:

ফাইল চিত্র।

স্বপ্নটা যেন আস্ত দুঃস্বপ্নের মতো চেপে বসেছে মুর্শিদাবাদের নাবালক পুরসভা ডোমকলের বাসিন্দাদের কাছে। মেরেকেটে আড়াই বছরের এই পুরসভায় খাতায়কলমে ২১টি ওয়ার্ড। কিন্তু পথঘাট, ফুটপাত, রাস্তার আলো, পাকা নিকাশি— পুর এলাকার কোনও ছায়াই ডোমকলের ত্রিসীমানায় খুঁজলে পাওয়া দুষ্কর। বরং পুরসভার ৮০ শতাংশ এলাকাই আবাদি জমি, গ্রামীণ মাঠঘাটে ঢাকা।

Advertisement

আর, তার জেরে, ৮৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ‘সি’ ক্যাটেগরির সব চেয়ে বড় মাপের এই পুরসভার ২১টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ বাসিন্দাই মূলত কৃষিনির্ভর। যাঁদের ঘাড়ে পুর করের বোঝা চাপলেও পুর-পরিষেবার খতিয়ান প্রায় শূন্য। ডোমকল পুরসভা এলাকার শতাধিক গ্রামের প্রায় ৭৪ হাজার বাসিন্দা তাই পুর এলাকার মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও তাঁদের দিনযাপন ঝুলে রয়েছে পঞ্চায়েত পরিষেবার সুতোয়।

এই শাঁখের করাতের আবহে এ বছর নতুন সমস্যায় পড়েছেন পুর-বাসিন্দারা— কৃষি দফতর থেকে সম্প্রতি তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পুর এলাকার বাসিন্দাদের ধানের বীজতলা থেকে ডাল শস্য কিংবা সারে ভর্তুকি দেওয়া আপাতত বন্ধ। কৃষি দফতরের স্পষ্ট নিদান, শস্য কিংবা সারে ভর্তুকি পাবেন তাঁরাই যাঁরা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। কৃষি দফতরের ভর্তুকি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডোমকলের বিস্তীর্ণ পুর এলাকার বাসিন্দাদের কৃষি ঋণও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে সার-ট্রাক্টর-গভীর নলকূপ কেনার জন্য যে ঋণ তাঁরা এ যাবৎ পেয়ে আসছিলেন, বন্ধ হয়ে গিয়েছে তা-ও।

Advertisement

এই অবস্থায়, ডোমকল পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হিতানপুর গ্রামের বাসিন্দা তারিখ আজিজ বলছেন, ‘‘বিঘা ছয়েক জমিতে ভাগ চাষ করতাম। গত বছরও কৃষি দফতরের কাছ থেকে সর্ষে এবং ডাল শস্যের বীজ পেয়েছিলাম। কিন্তু এ বার এক মুঠো বীজও দেওয়া হয়নি।
কৃষি দফতরে গিয়েছিলাম, সটান জানিয়ে দেওয়া হল ‘পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা ছাড়া বীজ দেওয়া হবে না।’’

ডোমকলের সহ-কৃষি অধিকর্তা পুলক দে বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সরকারি নিয়ম মেনে পুর-এলাকার কৃষিজীবী মানুষকে বীজ দেওয়া হবে না।’’ ডোমকল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের রেখা বিবি বলছেন, ‘‘গত বছরও আমরা ছাড় দিয়েছিলাম। কিন্তু এ বার, সরকারি নির্দেশিকা মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পুর এলাকার বাসিন্দাদের কৃষি ঋণ বা শস্য এবং সারে ভর্তুকি দেওয়া যাবে না।’’

এমন সরকারি সিদ্ধান্তে চমকে গিয়েছেন ডোমকলের পুরপ্রধান তৃণমূলের জাফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার ৮০ শতাংশ এলাকা কৃষিপ্রধান। কৃষি দফতর বা জেলা পরিষদ এমন সিদ্ধান্ত নিলে কৃষকদের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আমরা জেলাশাসকের কাছে বিষয়টি নিয়ে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement