নিজস্ব চিত্র।
সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল (সিএএ) পাশ করানোর জন্য তাঁকে সংবর্ধনা দেবে বিজেপি। আর ঠিক সেই কারণেই এবং দিল্লি-কাণ্ডকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিরোধীরা। কলকাতায় গত মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের সময়ে যেমন হয়েছিল, সেই কায়দাতেই এ বার স্লোগান থাকছে— ‘গো ব্যাক শাহ’!
দমদম বিমানবন্দরের বাইরে এবং ধর্মতলায় আজ, রবিবার প্রতিবাদী জমায়েতের ডাক দিয়েছে নানা সংগঠন। তা ছাড়াও কলকাতার আরও অন্তত ১০ জায়গায় বিক্ষোভ-সমাবেশ হবে দিল্লির ঘটনার পরে শাহের ইস্তফার দাবিতে। কালো পতাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাম, কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন দলের নানা শাখা সংগঠন। দলীয় পতাকা ছাড়াই ছাত্র, যুব ও সাধারণ মানুষকে প্রতিবাদে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। এসএফআই-সহ নানা বাম ছাত্র ও যুব সংগঠন ‘ব্ল্যাক সানডে’ পালন করবে।
শাসক দল তৃণমূলের অবশ্য আজ শাহ-বিরোধী এমন কোনও কর্মসূচি নেই। বিক্ষোভের কারণে আইনশৃঙ্খলাজনিত কোনও পরিস্থিতি তৈরি হলে তার দায় যেমন শাসক দলের উপরে এসে পড়বে, আবার তা সামাল দেওয়ার দায়িত্বও তৃণমূল পরিচালিত সরকারের। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, সেই জন্যই তারা এমন কোনও কাজ করতে চায় না, যাতে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হয়। কিন্তু শাহের কর্মসূচির দিকে নজর রাখা হবে। তিনি কী বলেন, দেখে নিয়ে রাজনৈতিক ভাবে তা মোকাবিলার কৌশল থাকবে। তার পাশাপাশি, পুলিশ-প্রশাসনও প্রস্তুত থাকছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর যাত্রাপথে কোনও রকম বাধা আটকানোর জন্য।
কলকাতায় এসে বিক্ষোভ এড়িয়ে আকাশ ও জলপথে সফর করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। শাহের অবশ্য এখনও পর্যন্ত সফরসূচি রয়েছে সড়কপথেই। বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, ‘‘গণতান্ত্রিক প্রতিবাদের অধিকার সকলের আছে। কিন্তু প্রত্যক্ষ ভাবে আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দিতে এলে তা ভেঙে চুরমার করে কী ভাবে এগোতে হয়, আমরা জানি! কোণঠাসা হয়ে যাওয়া বামেদের প্রচার পাওয়ার জন্য এ সব পদক্ষেপ!’’
সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব বিজেপির পাশাপাশি তৃণমূলকেও নিশানায় রেখে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র শনিবার বিধান ভবনে বলেছেন, ‘‘ধর্মের ভিত্তিতে দেশটাকে ভাগ করার চেষ্টা করছে বিজেপি। দিল্লিতে প্রতি দিন মানুষের তাজা রক্তে হাত রাঙাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলার মানুষের কাছে আবেদন, প্রায় নরখাদকের ভূমিকা নেওয়া এই মন্ত্রীর সভা বয়কট করুন।’’ একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সব বিরোধী দল যখন শাহের ইস্তফা দাবি করেছেন, এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তা করেননি। রাজীব কুমার এবং আরও নানা কর্তাব্যক্তিকে কেলেঙ্কারির তদন্ত থেকে বাঁচাতেই কি তাঁর এমন ভূমিকা?’’ কংগ্রেসের ছাত্র, যুব ও মহিলা শাখা আজ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করবে। কলেজ স্কোয়ারে ‘অমিত শাহের আসল রূপ দর্শন’ নামে অভিনব কর্মসূচি নিচ্ছে কলকাতা জেলা ছাত্র পরিষদ।
একই সুরে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম এ দিন বলেন, ‘‘অন্য কোনও দল অনুমতি না পেলেও শাহ মাইক বাজিয়ে সভা করতে পারবেন। তা হলে লোকসভা ভোটের আগে সভার অনুমতি নিয়ে রাজ্য প্রশাসন এত নাটক কেন করেছিল? ভুবনেশ্বরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই শাহকে কলকাতায় স্বাগত জানিয়ে রেখেছেন! কিন্তু বাংলার মানুষ শাহের ভূমিকা মাথায় রেখে প্রতিবাদ করবেন।’’ রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর সামাজিক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দও আজ মৌলালি থেকে মিছিল করে ধর্মতলা চত্বরে গিয়ে অবস্থানের ডাক দিয়েছে।