মমতার মিছিলে হাঁটলেন ৭৩ বছরের শান্তি চক্রবর্তীও। সোমবার। ছবি: মেহবুব কাদের চৌধুরী।
এক জনের আস্তানা নিউ মার্কেটের ফুটপাত। অন্য জনের বাড়ি বৌবাজার। দু’জনেরই বয়স সত্তর পেরিয়েছে। হাঁটাচলায় কার্যত অক্ষম। তবু নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ জানাতে সোমবার দু’জনেই হাজির রেড রোডে।
লাঠি ছাড়া হাঁটাচলা করতে না-পারলেও সোমবার মিছিল শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগেই পৌঁছে যান বছর তিয়াত্তরের শান্তি চক্রবর্তী। পরনে সাদা শাড়ি। গলায় ঝোলানো ‘নো ক্যাব, নো এনআরসি’ লেখা পোস্টার। কাঁধে ব্যাগ। দিন-আনি দিন-খাওয়া পরিবারে ছেলেই একমাত্র রোজগেরে। শারীরিক কারণে এ দিন মিছিলের পুরোটা হাঁটতে পারেনি শান্তিদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘বেঁচে থাকতে রাষ্ট্রের এ-রকম আইন দেখে যেতে হবে, তা ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি। আমি হিন্দু কিন্তু মুসলিম ভাইবোনেরা আশ্রয় চাইলে দোষ কোথায়? ধর্মের ভিত্তিতে এই বিভাজন মেনে নিতে পারছি না। তাই আমার এখানে আসা।’’
বৌবাজারের ঠাকুরদাস পালিত লেনের আদি বাসিন্দা শান্তিদেবীর বাড়িতে বৌমা, নাতনিও রয়েছে। আপনি তো বৌবাজারে বহু বছরের বাসিন্দা। ভয় কিসের? বৃদ্ধা বলেন, ‘‘আমাদের ভোটার, আধার কার্ড সবই রয়েছে। কিন্তু এনআরসি চালু হলে নাকি আরও নথি লাগবে। অসমে শুনেছি, অনেকের নাম বাদ গিয়েছে। আমরা বাকি কাগজপত্র পাব কোথায়?’’
আরও পড়ুন: অ্যাংলো ইন্ডিয়ানরা কেন বাদ, সরব মমতা
সত্তরোর্ধ্ব শেখ নাসিরের অবশ্য পরিবার বলতে কেউ নেই। ভিক্ষা করেই দিন গুজরান করেন। নিউ মার্কেট থেকে হাতে টানা রিকশায় পৌঁছে যান মিছিলে। কথা বলতে বলতে চোখ চিকচিক করে উঠল নাসিরের। নাগরিকত্ব আইনের ব্যাখ্যা তাঁর জানা নেই, রয়েছে শুধু আতঙ্ক। বললেন, ‘‘সবার মুখ থেকে শুনলাম, এ বার আমাদের এ দেশ থেকে চলে যেতে হবে। ঝড়, বৃষ্টি, রোদ সহ্য করে ফুটপাতটা বেশ শান্তির জায়গা। এখন তাড়িয়ে দিলে কোথায় যাব?’’
মিছিলে এসেছিলেন এন্টালির বাসিন্দা মহম্মদ নাসিরও। জাতীয় পতাকা নিয়ে। প্রশ্ন করতেই গর্জে উঠলেন। বললেন, ‘‘ভারতবর্ষই আমাদের দেশ। এখানেই আমার দু’পুরুষের বসবাস। আমি নাগরিকত্বের প্রমাণ দেব? আর মনে রাখবেন, আমি তৃণমূলের একনিষ্ঠ সমর্থক নই। নাগরিকত্ব আইন বিষয়টা তৃণমূলকেন্দ্রিকও নয়। এই আইন চালু করে দেশের সংবিধানকেই অমান্য করা হচ্ছে। আমাদের পাশে দিদি দাঁড়িয়েছেন বলে মিছিলে চলে এলাম।’’
ছোট ব্যবসায়ী নাসির জানান, মাস কয়েক আগে ছোট একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। বললেন, ‘‘প্রতিবেশীরা বলছেন, এনআরসি চালু হলে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য অনেক নথি লাগবে। আধার, ভোটার কার্ড, ফ্ল্যাটের দলিল কাজে লাগবে না। তা হলে এখন কী করব?’’