Lok Sabha Election 2024

আনন্দবাজার অনলাইনের মাস্টহেড ব্যবহার করে ফের ভুয়ো খবর সমাজমাধ্যমে, এ বার লক্ষ্য সেলিম, মিনাক্ষী

সমাজমাধ্যমের এই রমরমার সময়ে ভুয়ো খবর নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। যা নিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রায়ই ক্ষোভপ্রকাশ করেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৪ ২১:৩৬
Share:

মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়-মহম্মদ সেলিম। —ফাইল চিত্র।

লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার কয়েক দিন আগে আনন্দবাজার অনলাইনের মাস্টহেড ব্যবহার করে সমাজমাধ্যমে দু’টি ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে সে ব্যাপারে আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষে বিশেষ প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিল। ভোটের আগের সেই জোড়া ভুয়ো খবরের কেন্দ্রে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তথা তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এ বার ভোট চলাকালীন ফের দু’টি ভুয়ো স্ক্রিনশট সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে, যার লক্ষ্য সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা মুর্শিদাবাদের বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী মহম্মদ সেলিম এবং সিপিএমের যুবনেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

একটিতে সেলিম এবং সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যের বিকৃত ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে, ইদের দিন তাঁরা মদ্যপান করছেন। দ্বিতীয়টিতে মিনাক্ষীর ছবি দিয়ে শিরোনামে লেখা হয়েছে, ‘‘বামফ্রন্টের নেত্রী মিনাক্ষীর বিনা পরীক্ষায় চিরকুটে চাকরি। অথচ যোগ্য শিক্ষকদের কী করে চোর বলতে পারে?’’ দু’টি ক্ষেত্রেই আনন্দবাজার অনলাইনের মাস্টহেড ব্যবহার করা হয়েছে। সেলিমদের নিয়ে যে পোস্ট ঘুরছে তা নিয়ে সাইবার ক্রাইম সেলে অভিযোগও জানিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। পৃথক ভাবে দল জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনকেও। সেলিম বলেন, ‘‘বেশ কিছু দিন হয়ে গেলেও ওই পোস্ট নিয়ে পুলিশ এবং কমিশন কোনও পদক্ষেপ করেনি।’’ মিনাক্ষী দলের সর্ব ক্ষণের কর্মী হওয়ার আগে কুলটি কলেজে ভূগোলের পরীক্ষাগারে সহকারীর কাজ করতেন। তবে সেই চাকরি ছিল অস্থায়ী। বছর ছয় হল সেই চাকরি নিজেই ছেড়ে দিয়েছেন সিপিএমের যুবনেত্রী।

২০২২ সালে আসানসোল লোকসভার উপনির্বাচনের সময়ে আনন্দবাজার অনলাইনের নামে একটি জনমত সমীক্ষা ভাইরাল করে দেওয়া হয়েছিল সমাজমাধ্যমে। যাতে এগিয়ে রাখা হয়েছিল তৃণমূলের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিন্‌হাকে। সেই জনমত সমীক্ষার ফলাফল প্যামফ্লেটের আকারে ছাপিয়ে সেটি দৈনিক খবরের কাগজের মধ্যে ভরে গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করা হয়েছিল।। বাস্তবে আনন্দবাজার অনলাইন তেমন কোনও জনমত সমীক্ষা করেনি। শত্রুঘ্ন যদিও ভোটে বিপুল ভাবে জিতেছিলেন। এ বারেও তিনি আসানসোল কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী।

Advertisement

গত মার্চে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে একটি প্রতিবেদন ভাইরাল করা হয়েছিল। তার শিরোনাম, একান্ত সাক্ষাৎকারে অভিজিৎ জানিয়েছেন, তিনি সানি লিওনির ছবি দেখতে পছন্দ করেন। দ্বিতীয়টি তমলুকের বিদায়ী সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর ছবি দিয়ে। তার শিরোনাম, দিব্যেন্দু বিজেপির টিকিট না পেয়ে ক্ষুব্ধ। সেই কারণে তিনি বিজেপিতে যোগ দেওয়া অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে ‘নর্দমার কীট’ বলে কটাক্ষ করেছেন। তাতে দিব্যেন্দুর যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি আনন্দবাজার অনলাইনের একটি খবর থেকে নেওয়া হয়। কিন্তু মূল খবরটি ছিল ভুয়ো।

সমাজমাধ্যমের এই রমরমার সময়ে ভুয়ো খবর নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। যা নিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রায়ই ক্ষোভপ্রকাশ করেন। তিনি আগে বলেছেন, “বাংলাদেশের ঘটনাকে বাংলার বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে!” মুখ্যমন্ত্রীর সে উদ্বেগে খাদ নেই। সত্যিই বাংলাদেশের একটি ঘটনার ছবিকে পশ্চিমবঙ্গের ছবি বলে ভাইরাল করে দেওয়া হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট লোকজনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল। তবে পাশাপাশি এটিও সত্য যে, আনন্দবাজার অনলাইনের বিশ্বাসযোগ্যতার কারণেই রাজনীতির কারবারিদের একাংশ আমাদের মাস্টহেড ব্যবহার করে এই ধরনের ভুয়ো খবরের স্ক্রিনশট ছড়াচ্ছেন। অর্থাৎ, যাঁরা এ কাজ করছেন, তাঁরা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিচ্ছেন, আনন্দবাজার অনলাইনের খবর বললে বা আনন্দবাজার অনলাইনের লাল-সাদা মাস্টহেড ব্যবহার করলে তা ‘বিশ্বাসযোগ্য’ হয়! সেটা আমাদের কাছে একপ্রকার শংসাপত্রও বটে।

কিন্তু খবরটি ভুয়ো কি না, তা বোঝার সহজ উপায় রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইনের খবরের শিরোনামের স্ক্রিনশট হয়ে যা যা বিভিন্ন ইনবক্সে ঘোরে বা ফেসবুক অথবা এক্সের (সাবেক টুইটার) ফিডে ভেসে বেড়ায়, সেগুলি সত্য কি না, তা যাচাই করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের বাংলা শিরোনামটি গুগলে গিয়ে ‘সার্চ’ করুন। তা হলেই জানা যাবে আনন্দবাজার অনলাইন ওই খবর প্রকাশ করেছে কি না। সাধারণত এই ধরনের ভুয়ো খবরে মাস্টহেড-সহ শিরোনামের স্ক্রিনশট ছাড়া আর কিছু থাকে না। সচেতন পাঠক মাত্রেই জানেন, শুধু শিরোনাম দিয়ে কোনও খবর হয় না। শিরোনামের পরে পুরো খবরটি থাকে। তা ছাড়াও, আনন্দবাজার অনলাইনের বিশেষ ‘ফন্ট’ রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুয়ো স্ক্রিনশটে ভিন্ন ‘ফন্ট’ ব্যবহার করা হয় এবং হচ্ছে। তবে এই ধরনের কারিগরেরা ক্রমশ তাঁদের কাজে দড় হয়ে উঠছেন। ফলে তুলনায় কাছাকাছির ‘ফন্ট’ও ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই কারণেই প্রাথমিক সাবধানতাটুকু আরও জরুরি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement