বিস্তর টানাপড়েনের পরে স্কুল স্তরে পাশ-ফেল প্রথা ফেরাতে শিক্ষার অধিকার আইন সংশোধন হয়েছে গত জানুয়ারিতে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে চলতি বছরে ওই পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করার ক্ষেত্রে আবার জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তার মূলে আছে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের একটি নির্দেশিকা। ওই মন্ত্রক গত সপ্তাহে রাজ্যগুলিকে জানিয়েছে, সংশোধনী কার্যকর হবে ১ মার্চ থেকে। অর্থাৎ সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী পাশ-ফেল প্রথা ফের চালু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কী ভাবে এখনই এই নতুন ব্যবস্থা চালু করা যাবে, সেই বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে শিক্ষা শিবিরে।
জানুয়ারিতে সংশোধনী বিলটি পাশ হওয়ায় পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পরীক্ষার পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার অধিকার পেয়েছে রাজ্যগুলি। পশ্চিমবঙ্গে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে নতুন সেশন বা শিক্ষাবর্ষ চালু হয়েছে জানুয়ারিতে। প্রায় আড়াই মাস ক্লাস হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় চলতি শিক্ষাবর্ষে পাশ-ফেল প্রথা চালু করা কোনও ভাবেই সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্কুলশিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক। তাঁর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার আইসিএসই এবং সিবিএসি বোর্ডের দিকে তাকিয়ে এমন নির্দেশ দিয়েছে। কারণ, ওই দুই বোর্ডের নতুন সেশন শুরু হয় এপ্রিলে।
সংশোধনী অনুযায়ী পঞ্চম বা অষ্টম শ্রেণিতে কেউ অকৃতকার্য হলে দু’মাস পরে সেই পড়ুয়াকে ফের পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা করে দিতে হবে স্কুলকে। তাতেও যদি ওই পড়ুয়া ব্যর্থ হয়, তখন তাকে একই শ্রেণিতে রেখে দেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য তথা স্কুল। এই সব বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে বলে জানান ওই স্কুলশিক্ষা আধিকারিক। সেই সব প্রশ্নের মধ্যে আছে: অকৃতকার্য পড়ুয়াদের জন্য দু’মাস পরে ‘রেমিডিয়াল টেস্ট’-এর ব্যবস্থা হলে সেই পরীক্ষা কী ভাবে নেওয়া হবে? কোনও পড়ুয়া অকৃতকার্য হলে রেমিডিয়াল টেস্ট নেওয়ার আগে কি তাকে স্কুলে আসতে বলা হবে? এলে সে কোন ক্লাসে বসবে? রেমিডিয়াল টেস্টে অকৃতকার্য হলে ক্লাসে পড়ুয়ার সংখ্যাও বাড়বে। ওই আধিকারিক জানান, অনেক বিষয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে। আড়াই মাস ক্লাস হয়ে যাওয়ার পরে কী ভাবে নতুন নিয়ম চালু করা হবে,
সেটা ভাবা দরকার। তা ছাড়া এ রাজ্যে পাশ-ফেল ফেরানোর বিষয়ে শিক্ষা শিবির এবং রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে মতের অমিল রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই।
রাজ্যে পাশ-ফেল কবে ফেরানো হবে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগে বারে বারেই জানিয়েছেন। সোমবার তিনি জানান, ১ মার্চ থেকে নতুন নিয়ম রূপায়ণের কেন্দ্রীয় নির্দেশের বিষয়টি এখনও তাঁর কাছে আসেনি। তাই তিনি কোনও মন্তব্য করতে পারছেন না।