নলহাটিতে ফের ‘হুমকি’ কেষ্টর

অনুব্রতর কথায়, ‘‘এখানে বিরোধীদের মনোনয়ন তুলতে দেওয়া হবে না। কারণ, ওরা দশকের পর দশক ক্ষমতায় থেকেও কোনও উন্নয়ন করেনি।’’

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

নলহাটি শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:০৮
Share:

ফের তাদের হুমকি দিয়েছেন অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডল। এই মর্মে সরব হল বিরোধীরা। পুরসভা এবং বিধানসভা তৃণমূলের দখলে এলেও, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে নলহাটিতে এখনও ভাল ফল হয়নি শাসকদলের। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের আগে বীরভূমের এই জনপদের সামগ্রিক ‘দখল’ পেতে বহু দিন ধরেই বাড়তি তৎপরতা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। নাগাড়ে চলছে নানা কর্মসূচি। শনিবার ব্লকভিত্তিক জনসভায় সেই নলহাটি ১-এর মাটিতে দাঁড়িয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি। অনুব্রতর কথায়, ‘‘এখানে বিরোধীদের মনোনয়ন তুলতে দেওয়া হবে না। কারণ, ওরা দশকের পর দশক ক্ষমতায় থেকেও কোনও উন্নয়ন করেনি।’’

Advertisement

নানা ঘটনায় অনুব্রতর হুমকি নতুন নয়। বিরোধীদের ‘হাত-পা ভেঙে দেওয়ার’ হুমকি থেকে শুরু করে ‘চোখ উপ়ড়ে’ নেওয়া— বিতর্কের স্রোত বয়ে গিয়েছে বহু মন্তব্য ঘিরেই। তবে, নলহাটিতে কেন বিরোধীদের মনোনয়ন তুলতে বাধা দেওয়া হবে, তার ব্যাখ্যাও শুনিয়েছেন তিনি। সিপিএম, বিজেপি-র মতো বিরোধী দলের নেতারা অবশ্য এই হুমকি গায়ে মাখছেন না। তাঁদের কথায়, ‘‘এ তো গা–সওয়া হয়ে গিয়েছে। মানুষ যা করবেন মনে মনে ঠিক করেই রেখেছেন। শুধু ভোটটা আসতে দিন।’’

মেঘলা আবহাওয়া, হাল্কা বৃষ্টি উপেক্ষা করে নলহাটি সাহেববাগান মাঠে গ্রাম এবং শহর থেকে আসা দলীয় কর্মীদের উপস্থিতি দেখে খুশি তৃণমূল নেতৃত্ব। জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশরায় চৌধুরী থেকে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, দলের জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ থেকে বিধায়ক মইনুদ্দিন শামস, হাঁসন কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক অসিত মাল সকলেই আগামী ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ী করার আবেদন রাখেন।

Advertisement

ঘটনা হল, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নলহাটি ১ এর ফল তৃণমূলের অনুকূলে ছিল না। পঞ্চায়েত সমিতির ২৬টি আসনের মধ্যে সিপিএম ১৯, কংগ্রেস ৬টি আসন পায়। তৃণমূল পায় একটি মাত্র আসন। জেলা পরিষদের তিনটি আসনের মধ্যে দু’টিতে সিপিএম এবং একটিতে ফরওয়ার্ড ব্লক জেতে। ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে একক ভাবে তৃণমূল কেবলমাত্র বাউটিয়া দখল করেছিল। বাকিগুলির মধ্যে হরিদাসপুর পঞ্চায়েতে বিজেপির সমর্থনে তৃণমূল প্রধান, বড়লা অঞ্চলে বিজেপি-কংগ্রেসের সমর্থনে তৃণমূলের প্রধান হয়। আবার কুরুমগ্রাম, কয়থা ২ পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের সমর্থনে তৃণমূলের প্রধান হন। পরে কংগ্রেস সদস্যদের ভাঙিয়ে কয়থা ১ পঞ্চায়েতও ‘দখল’ করে তৃণমূল। পঞ্চায়েত সমিতিতেও সিপিএমের ১৯ জন সদস্যের মধ্যে ৯ জন এবং কংগ্রেসের ছয় সদস্যর মধ্যে ৫ সদস্যকে ভাঙিয়ে অনাস্থা আনলেও আইনি জটিলতায় এখনও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ঠিক করতে পারেনি। জেলা পরিষদের তিন সদস্যের মধ্যে ফরওয়ার্ড ব্লকের সদস্যকে তৃণমূল দলে টানতে পেরেছে। এটুকুই!

এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতৃত্বের এ বারের পাখির চোখ অবশ্যই নলহাটি ১ পঞ্চায়েত সমিতি। দলীয় কর্মীদের মানুষের পাশে থাকা থেকে দুর্নীতি থেকে দূরে থেকে কাজ করার নির্দেশ দেন অনুব্রত। সমালোচনা করেন বিরোধীদেরও। পরে বড়লা এবং কুরুমগ্রাম থেকে আসা কুড়ি-পঁচিশ জন বিজেপি কর্মীদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement