এসএফআই নেতা সৃজন ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
যাদবপুরের ঘটনার পর সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই তথা বামেদের তরফে একটি ছবি সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায়, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ির তলায় আড়াআড়ি ভাবে পড়ে রয়েছেন এক ছাত্র। এর পর সেই ছবিকে সামনে রেখেই এসএফআইয়ের উদ্দেশে পাঁচটি প্রশ্ন তোলে বাংলার শাসকদল। তৃণমূলের আইটি সেলের প্রধান দেবাংশু ভট্টাচার্য গত মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে একাধিক ছবি এবং ভিডিয়ো দেখিয়ে দাবি করেছিলেন, বামেরা যে প্রচার করছে, তা সর্বৈব অসত্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁর তোলা পাঁচ প্রশ্নের অন্যতম ছিল— এসএফআইয়ের দেখানো স্থিরচিত্রের ভিডিয়ো কই? কেন তারা ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আনছে না? শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশের ডাকে সাড়া দিয়ে এসএফআইয়ের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য যাদবপুর থানায় গিয়েছিলেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর সেখান থেকে বেরিয়ে সৃজন জানান, পুলিশকে ওই ভিডিয়ো তিনি দিয়ে এসেছেন।
বামেদের অভিযোগ ছিল, ইন্দ্রানুজ রায় নামের এক ছাত্রকে পিষে দিয়ে চলে গিয়েছে ব্রাত্যের গাড়ি! এসএফআইয়ের প্রকাশ করা সেই স্থিরচিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বাংলার শাসকদল। শনিবার যাদবপুরকাণ্ডের তদন্তের সূত্র ধরে সৃজনকে তলব করে পুলিশ। সেই তলব পাওয়ার পর শনিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ যাদবপুর থানায় যান তিনি। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ থানা থেকে বার হন তিনি। আড়াই ঘণ্টা ধরে থানায় তাঁকে কী কী বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল। ওই বিতর্কিত ভিডিয়োটি তিনি পুলিশকে দিয়েছেন কি না, সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছিল। যাদবপুর থানা থেকে বেরিয়ে ওই ভিডিয়ো প্রসঙ্গে সৃজন বলেন, ‘‘একটি সংবাদমাধ্যমের বুলেটিন থেকে ওই ছবিটি পাওয়া গিয়েছিল।’’ এত দিন কেন সেই ভিডিয়ো জনসমক্ষে আনেননি তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তরুণ বাম নেতা। তাঁর কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যমের লোগো লাগানো ওই বুলেটিন সব সংবাদমাধ্যমে দেখানো সম্ভব নয়। তৃণমূল ওটা নিয়েই ফোঁস করছিল। আজ পুলিশকে অনেক কিছুর সঙ্গে ওই বুলেটিনও দিয়ে এসেছি। ওই ভিডিয়ো বুলেটিনের মধ্যেই ছবিটি রয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, ভিডিয়ো নিয়ে যা বলেছেন, তা পুরোটাই সৃজনের দাবি। পুলিশের তরফে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। যাদবপুরের সেই দিনের ঘটনার রেশ ধরেই সৃজনকে তলব করা হয়েছিল। সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা তাঁর কাছ থেকে বেশ কিছু বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। যাদবপুরের সঙ্গে সৃজনের সম্পর্ক কী, ঘটনার দিন তিনি সেখানে ছিলেন কি না, তাঁর কাছে ঘটনা সম্পর্কিত কী কী তথ্য বা ছবি-ভিডিয়ো রয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় উঠে এসেছে এমন নানা প্রশ্ন। সেই সূত্র ধরেই ওঠে ওই বুলেটিনের প্রসঙ্গও। সৃজনের দাবি, পুলিশকে ওই বুলেটিন তিনি হস্তান্তরিত করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১ মার্চ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন ব্রাত্য। অভিযোগ, তাঁর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। ছাত্রভোটের দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। সেই সময় ব্রাত্যের গাড়িতে ইট ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। ব্রাত্য আহতও হন। অন্য দিকে, দু’জন ছাত্র এই অশান্তিতে আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ। এসএফআইয়ের অভিযোগ, ব্রাত্যের গাড়ির ধাক্কায় জখম হয়েছেন তাঁরা। সেই ঘটনার প্রতিবাদে প্রথম দিন থেকেই ক্যাম্পাসে তো বটেই, যাদবপুর চত্বরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে এসএফআই-সহ অন্যান্য বাম সংগঠন। ব্রাত্যের গাড়িতে ভাঙচুর এবং হামলার ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছে তৃণমূলও।