প্রতীকী ছবি।
থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে রাখা বা মাস্ক ছাড়াই অনায়াসে ঘোরাঘুরি। জ্বর দিন কয়েক চললেও পরীক্ষায় অনীহা। যেখানে-সেখানে থুতু ফেলা।
পুজোর মরসুম শেষ হওয়ার পর সাধারণ মানুষের এই গা-ছাড়া মনোভাব বেড়েই চলেছে। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, পুজো পর্যন্ত তা-ও করোনা সম্পর্কে ভয়ভীতি ছিল। কিন্তু তার পর থেকে করোনা বিধি মানতে মানুষের অনীহা বাড়ছে। তাঁরা স্পষ্টই জানাচ্ছেন, পরিসংখ্যানের নিরিখে আপাতদৃষ্টিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম মনে হলেও, আত্মসন্তুষ্টির কোনও জায়গাই নেই। কারণ, বিশেষজ্ঞদের ছাড়পত্র পেয়ে প্রতিষেধক যদি আগামী বছরের প্রথম দিকেও পাওয়া যায়, তা হলেও সবাই তা প্রথমেই পাবেন না এবং প্রথম ধাপে যাঁরা পাবেন, তাঁদের সম্পূর্ণ টিকাকরণ কবে শেষ হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। তাই চিকিৎসকদের মত, অন্তত আগামী এক বছর সকলকেই মাস্ক পরা, হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্য বিধি, দূরত্ব-বিধি মেনেই চলতে হবে। তা না-হলে করোনার বিপদ বাড়বে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলছেন, ‘‘ট্রেন, বাসে দূরত্ব-বিধি মেনে চলা সম্ভব নয় ঠিকই। কিন্তু মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, বাইরে বেরোলে বাড়ি ফিরে জামা-কাপড় ধোয়া, যখন তখন চোখে-মুখে হাত না-দেওয়ার মতো বিধি প্রথমে সকলে মানলেও, এখন গা-ছাড়া মনোভাব দেখা দিয়েছে। এটা খুবই খারাপ লক্ষণ। যত দিন না রোগটা পুরো চলে যাচ্ছে বা ভ্যাকসিন দিয়ে তা প্রতিহত করা যাচ্ছে, তত দিন এই সব কিছুই মেনে চলতে হবে।’’ তাঁর আরও দাবি, সাধারণ মানুষের একাংশের ‘করোনা আবার কী’ জাতীয় মনোভাবের ফলে রোগের সংক্রমণ বাড়তে পারে।
করোনা পরিস্থিতি এখনও খারাপ বলেই মনে করছেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের শিক্ষক-চিকিৎসক যোগীরাজ রায়। তিনি বলেন, ‘‘করোনায় সঙ্কটজনক রোগীর সংখ্যা কমেনি এবং করোনায় গত দু’তিন মাসে মৃত্যুর হার একই রয়েছে। মানুষকে তা মনে রাখতে হবে।’’ এই আবহে সাধারণ মানুষ কী ভাবে গা ছাড়া মনোভাব এবং পরীক্ষা না করানোর দুঃসাহস দেখাচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে চিকিৎসক মহল।
এই পরিস্থিতিতে করোনা পরীক্ষার হার কোনও ভাবে কম হওয়া উচিত নয় বলেই মনে করেন কার্ডিয়োথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকার। তিনি জানান, দেশে যেখানে টেস্ট পজ়িটিভিটি রেট (টিপিআর) ১২-১৪ শতাংশ ছিল, তা এখন ৩-৩.৫ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। রাজ্যে তা ৮ শতাংশের কাছাকাছি। আবার রাজ্যে মৃত্যুর হারও দেড় শতাংশের উপরে। কুণালবাবু বলেন, ‘‘গোটা দেশে অতিমারি কমেছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে করোনার তীব্রতা একই রয়েছে। আবার রাজ্যের জনসংখ্যার নিরিখে আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও, অপর্যাপ্ত কোভিড পরীক্ষার কারণে প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যায়।’’
তবে দুর্গা, কালীপুজোয় মানুষ যে সংযম দেখিয়েছেন, তা বিশ্বের অতিমারির ইতিহাসে দৃষ্টান্ত বলেও মত কুণালবাবুর। কিন্তু গা ছাড়া মনোভাব ও পরীক্ষা কম হওয়ায় পরবর্তী দিনগুলো নিয়ে আশঙ্কা থেকে যায় বলেও জানান তিনি। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সভাপতি অর্জুন দাশগুপ্তের কথায়, ‘‘মানছি, বিবিধ বিধি মানতে গিয়ে সকলেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। কিন্তু এখনই হাল ছাড়লে চলবে না। পরিসংখ্যানের দিক থেকে দেশ ও রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা স্থিতিশীল হলেও, আরও কিছু দিন সকলকে ধৈর্য ধরতেই হবে।’’