Coromandel Express accident

করমণ্ডলকাণ্ডের পরে ট্রেনের সুরক্ষায় জোর, স্টেশন মাস্টারদের বাড়তি দায়িত্ব হাওড়া ডিভিশনে

করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ বার মেরামতির কাজ চলাকালীন বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ জারি করল পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশন।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩ ০৭:২০
Share:

করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনার দৃশ্য। —ফাইল চিত্র।

করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার দিন সংলগ্ন লেভেল ক্রসিংয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে সিগন্যালিং ব্যবস্থা মেরামতির কাজ করা হয়েছিল। ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে মেরামতির সেই কাজ সম্পূর্ণ করার পরে পয়েন্ট ঠিক জায়গায় আছে কি না, তা পরীক্ষা না করেই ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিংব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। আর তার জেরেই বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান। সেই দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রেলের অস্বস্তি বাড়িয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়ার একাধিক ঘটনার খবর সামনে এসেছে।

Advertisement

ওই দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ বার মেরামতির কাজ চলাকালীন বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ জারি করল পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশন। শুধুমাত্র যন্ত্রের উপরে ভরসা না রেখে বিশেষ পরিস্থিতিতে স্টেশন মাস্টারদের দাঁড়িয়ে থেকে পয়েন্টে নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, পয়েন্ট যাতে কোনও ভাবেই তার অবস্থান থেকে সরে না যায়, তা নিশ্চিত করতে ক্ল্যাম্প দিয়ে সেটি আটকানোর নির্দেশও দিয়েছে পূর্ব রেল। পয়েন্ট (রেললাইনের যে অংশ দিয়ে লাইন পরিবর্তন করা হয়) ‘সেট’ করার ক্ষেত্রে সব দিক থেকে ভুলচুক এড়াতেই এই ব্যবস্থা বলে রেল সূত্রের খবর। এই নির্দেশ কঠোর ভাবে পালন করার কথাও বলা হয়েছে হাওড়ার সিনিয়র ডিভিশনাল অপারেশন্স ম্যানেজারের পক্ষ থেকে। কোথাও এই নির্দেশ উপেক্ষা করা হলে তা গুরুতর ত্রুটি হিসাবে বিবেচিত হবে বলেও জানানো হয়েছে রেলের পক্ষ থেকে।

গত ২ জুন ওড়িশার বাহানাগা বাজার স্টেশনের রেলগেটের বুম ব্যারিয়ার মেরামতির জন্য নির্দিষ্ট ফর্ম জমা দিয়ে লিখিত অনুমতি সাপেক্ষে ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল। তার পরে বিকেল ৪টে ৩৫ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ওই স্টেশনে ম্যানুয়াল সিগন্যালিং ব্যবস্থায় ধীরে গতিতে ট্রেন পারাপার করানো হয় বলে রেল সূত্রের খবর। অভিযোগ, ৬টা ৫০ নাগাদ মেরামতির কাজ শেষ হওয়ার পরে পয়েন্ট পরীক্ষা না করেই সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু করে দেওয়া হয়। তার জেরেই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানা গিয়েছে। রিলে-নিয়ন্ত্রিত সিগন্যাল ব্যবস্থায় বৈদ্যুতিক সংযুক্তির ত্রুটিতে পয়েন্ট ঠিক দিকে না থাকা সত্ত্বেও করমণ্ডল এক্সপ্রেস আপ মেন লাইন দিয়ে যাওয়ার সঙ্কেত পায় বলে অভিযোগ।

Advertisement

সাধারণত, নির্দিষ্ট কোনও পয়েন্টে ট্রেন যে লাইন দিয়ে যাবে, তার পাশে সরু হয়ে আসা পাতের মতো বিশেষ রেলের (যার পোশাকি নাম ‘টাং রেল’) মূল লাইনের (স্টক রেলের) সঙ্গে লেগে থাকাটা জরুরি। দু’টি লাইনের মধ্যে ফাঁক থাকলে ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়া অবধারিত। ওড়িশার ঘটনাতেও ১৭ নম্বর পয়েন্টে টাং এবং স্টক রেলের মধ্যে ফাঁক বেশি ছিল বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার কথা মাথায় রেখেই ব্লক নিয়ে বিভিন্ন মেরামতির কাজ চলাকালীন পয়েন্ট ঠিক জায়গায় বসানোর পরে তা যাতে কোনও ভাবেই সরে না আসে, তা নিশ্চিত করতেই ক্ল্যাম্প লাগানোর নির্দেশ দিয়েছে পূর্ব রেল। ওই কাজ করতে হবে কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টারদের কাউকে।

রেল সূত্রের খবর, ওড়িশার ঘটনার পরে কোথাও কোনও রকম ঝুঁকি নিতে চাইছেন না রেলকর্তারা। পয়েন্ট ঠিক জায়গায় আনার ক্ষেত্রে স্টেশন মাস্টারদের পুরোপুরি সজাগ থাকা নিশ্চিত করতেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মেরামতি সম্পূর্ণ হলে গোটা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে তার পরে প্রয়োজন অনুযায়ী ক্ল্যাম্প খুলে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা সচলকরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রেলের পক্ষ থেকে। রেলকর্তাদের অবশ্যদাবি, এমন সতর্কতা অবলম্বন করার কথা রেলের কর্মপদ্ধতিতেই আছে। বিশেষ পরিস্থিতিতে তা সকলকে আর এক বার মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে মাত্র।

রেলের শ্রমিক ইউনিয়ন এই নির্দেশকে স্বাগত জানালেও এ নিয়ে রেলকে খোঁচা দিতেও ছাড়েনি। ‘ইস্টার্ন রেলওয়ে মেন্স ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষ বলেন, ‘‘রেলে নিয়োগ শুরু হলেও সারা দেশে এখনও যাত্রী-সুরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত সওয়া লক্ষ পদ খালি। স্টেশন মাস্টারদের উপরেও কাজের অসম্ভব চাপ রয়েছে। কর্মীদের উপরে কাজের চাপ বাড়ানোর চেয়েও বেশি জরুরি, সুরক্ষা সংক্রান্ত শূন্য পদ দ্রুত পূরণ করা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement