যোগাযোগ বন্ধ, বিপদ মাথায় নামল বিমান

কো-পাইলটের দিকে চেয়ে পাইলট বললেন, ‘‘রেডিয়ো কমিউনিকেশন ফেলিয়োর।’’ অর্থাৎ পাইলট এবং এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) মধ্যে সমস্ত মৌখিক যোগাযোগ বন্ধ। 

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৫৮
Share:

ফাইল চিত্র।

সামনে সাদা মেঘে ঢাকা আকাশ। এয়ারবাসে ৯৫ জন যাত্রী। ককপিটে আচমকাই স্তব্ধ হয়ে গেল যোগাযোগ।

Advertisement

কো-পাইলটের দিকে চেয়ে পাইলট বললেন, ‘‘রেডিয়ো কমিউনিকেশন ফেলিয়োর।’’ অর্থাৎ পাইলট এবং এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) মধ্যে সমস্ত মৌখিক যোগাযোগ বন্ধ।

বুধবার ইম্ফল থেকে উড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার এআই৭১৪ উড়ান তখন বাংলাদেশের আকাশে। ঘড়ি দেখলেন পাইলট, বেলা ৩টে ৫২। এই ধরনের চূড়ান্ত জরুরি অবস্থায় একটি কোড ব্যবহার করা হয়। পাইলট তাঁর সিস্টেমে সেই কোড দিতেই ‘রেডিয়ো কমিউনিকেশন ফেলিয়োর’-এর খবর স্যাটেলাইট মারফত ছড়িয়ে যায়। ৩০ হাজার ফুট উপরে ককপিটে বসে সামনে শুধু মেঘ আর রঙের বিচিত্র খেলা ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। সেখানে পাইলটদের কাছে একমাত্র সম্বল এটিসি-র পথনির্দেশ। কিছু ক্ষণ অন্তর পাইলটের সঙ্গে কথা বলেন এটিসি অফিসারেরা। কখন কত উচ্চতায় বিমানকে রাখতে হবে, কোন রুটে উড়তে হবে, কাছাকাছি কোথায় অন্য বিমান রয়েছে— এই সমস্ত তথ্য আসতে থাকে এটিসি-র কাছ থেকে।

Advertisement

সেই পথনির্দেশ বন্ধ হয়ে গেলে পাইলটকে পুরোপুরি ককপিটের মনিটরে রাখা দিক-নির্দেশের উপরে ভরসা রাখতে হয়। এ দিনও সেটুকু ছাড়া আর কিছু করার ছিল না ইম্ফল-কলকাতা উড়ানের দুই পাইলটের। কলকাতা বিমানবন্দরের এটিসি প্রথমে যোগাযোগ করে ঢাকা এটিসি-র সঙ্গে। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী এ-সব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিমানকে আকাশে যথেষ্ট বেশি জায়গা করে দিতে হয়। সাধারণত উপর-নীচে এক হাজার ফুট এবং সামনে-পিছনে ১০ নটিক্যাল মাইল দূরত্ব রাখা হয় দু’টি বিমানের মধ্যে। এ দিন এআই৭১৪ উড়ানের ক্ষেত্রে তা সঙ্গে সঙ্গে দ্বিগুণ করে দিতে বলা হয় ঢাকা এটিসিকে।

একতরফা এটিসি থেকে পাইলটকে দু’বার করে বার্তা পাঠানো শুরু হয়। যদি এক-দু’বার সেই বার্তা পাইলটের কানে পৌঁছয়। এ দিন পাইলট যে দু’তিন বার সেই বার্তা পেয়েছেন, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে মনিটরে। দেখা গিয়েছে, মিনিটখানেক আগে এটিসি-র দেওয়া নির্দেশ একদম পুঙ্খানুপুঙ্খ মেনে চলছেন পাইলট। পরের মুহূর্তেই অবশ্য মনিটরে বিমানের অবস্থান দেখে বোঝা গিয়েছে, পাইলট শেষ বার্তাটি পাননি। পাইলটের তরফ থেকে একটি বার্তাও এটিসি-র কাছে পৌঁছয়নি।

এ ভাবেই কলকাতার কাছে আসে বিমানটি। তাকে অবতরণের পথ করে দিতে আকাশে অন্যান্য বিমানকে আটকে রাখা হয়। বেশ কিছু ক্ষণের জন্য খালি রেখে দেওয়া হয় রানওয়ে। এটিসি টাওয়ার থেকে পাইলটকে বিশেষ সবুজ আলোর সঙ্কেত পাঠিয়ে বিকেল ৪টে ৫৫ মিনিটে নির্বিঘ্নে নামিয়ে আনা হয় বিমানটিকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement