‘অবাঙালিত্ব’ মুছতে মরিয়া চেষ্টা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র।
ক’দিন আগেই কাটোয়ায় গিয়ে ঢাক বাজিয়েছেন। শনিবার বহরমপুরে কীর্তন গেয়েছেন। আর রবিবার সাতসকালে টুইট করে করলেন সুচিত্রা সেন স্মরণ। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বারবার ‘বহিরাগত’ আক্রমণের জবাবে যেন নিজের ‘অবাঙালিত্ব’ মুছতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্য বিজেপি-র পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়।
২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ৮২ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছিল বাঙালির ‘মহানায়িকা’ সুচিত্রা সেনের। এই ধরনের দিন কখনও ভুলে যান না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার নিজের ফেসবুক পেজে ‘মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের প্রয়াণ দিবসে আন্তরিক শ্রদ্ধার্ঘ্য’ পোস্ট করেছেন মমতা। প্রায় একই সময়ে ‘বাঙালির সুচিত্রা’কে স্মরণ করেছেন কৈলাস। তবে হিন্দিতে। লিখেছেন, ‘সাত পাকে বাঁধা ছবির জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়ে তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী হিসাবে কোনও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছেন’।
নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহর অত্যন্ত ভরসার কৈলাস নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে বঙ্গ বিজেপির অন্যতম সেনাপতি। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই শাসক দল তৃণমূল বারবার তাঁকে ‘বহিরাগত’ বলে আক্রমণ করে আসছে। বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বেজে যাওয়ার পরে সেই আক্রমণ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। তৃণমূল যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তো একাধিক জনসভায় নাম করেই কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে বহিরাগত বলেছেন।
আরও পড়ুন: জিতেন্দ্র জেলা কমিটির বাইরেই, দলে আছি, বার্তা দিলেন বিধায়ক
বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কিংবা বাংলায় পদ্ম শিবিরের পর্যবেক্ষক হলেও কৈলাস মূলত মধ্যপ্রদেশের রাজনীতিক। জন্ম থেকে শিক্ষা, রাজনীতিতে হাতখড়ি সবই মধ্যপ্রদেশে। সেই রাজ্যে বিধায়ক থেকেছেন। ইনদওরের মেয়রও ছিলেন। সেই কৈলাস এখন দলের কর্মসূচিতে গিয়ে বাঙালি খাওয়া দাওয়াও শুরু করেছেন। তবে নিরামিষ। সেই সঙ্গে ‘অবাঙালিত্ব’ মোছার জন্য অন্য চেষ্টাও যেন করে চলেছেন।
এমন নিদর্শন দেখা গিয়েছিল গত ৯ জানুয়ারি কাটোয়ার জগদানন্দপুর গ্রামের কাছে রাধাগোবিন্দ মন্দিরে। রাজ্য সফরে এসে পূর্ব বর্ধমান জেলার ওই মন্দিরে পুজো দিতে যান বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা। তখনই মন্দিরের বাইরে বাদ্য হিসেবে বাঙালির অতি পরিচিত ঢাক বাজাতে দেখা যায় কৈলাসকে। কিন্তু আচমকা ঢাক বাজাতে গেলেন কেন কৈলাস? এ কি নিজেকে তৃণমূলের ‘অবাঙালি’ এবং ‘বহিরাগত’ বলে রাজনৈতিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা? এমন প্রশ্ন উঠেছিল সে দিনই।
আরও পড়ুন: আপনার তথ্য সুরক্ষিত, স্টেটাস দিয়ে জানাল হোয়াটসঅ্যাপ
এর পর শনিবার মুর্শিদাবাদেও এক অন্য রূপে দেখা যায় কৈলাসকে। বহরমপুরে বিজেপির উদ্যোগে হওয়া কীর্তন, বাউল এবং ভক্তি গায়ক কল্যাণ সঙ্ঘের সম্মেলনে যান কৈলাস। সেখানে বক্তব্যও রাখেন। তার পর নিজেই কীর্তনে অংশ নেন। মঞ্চে খোল-কর্তাল সহযোগে ‘কৃষ্ণ-নাম’ শোনান। পিছনে দু’হাত তুলে নাচতে দেখা যায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া বিধাননগর পুরসভার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজারহাট নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্তকে। হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় অবশ্য শুধুই কীর্তনের তালে তালে করতালি দেন।