প্রতীকী ছবি।
অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হতেই উদ্বেগ ছড়াল সীমানার এপারে। সমস্ত কাগজপত্র জমা দেওয়া সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়দের অনেকের নাম বাদ পড়ায় এখন কী করা যায়, সেই চিন্তাতেই কার্যত গোটা দিনটা কেটে গেল কুমারগ্রামের ভল্কা বারবিশা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বহু বাসিন্দার।
অসম-বাংলা সীমানা লাগোয়া ভল্কা বারবিশা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে এমন অনেক মহিলা রয়েছেন, যাঁদের অনেকেরই বিয়ে হয়েছে নম্নি অসমের বিভিন্ন জেলায়। কিন্তু বছরখানেক আগে এনআরসি-র খসড়া তালিকা প্রকাশের পর দেখা গিয়েছিল, তাঁদের অনেকের নামই সেই তালিকায় নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তার পর ফের প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র নির্দিষ্ট জায়গায় জমা দেওয়া হয়েছে। এর পরেও শনিবার প্রকাশিত এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকায় এলাকার অনেকের নাম নেই বলে অভিযোগ করেছেন এই অঞ্চলের বাসিন্দারা।
বারবিশার পঞ্চায়েত পাড়ায় বাড়ি সুবলচন্দ্র দাসের। যিনি আবার ভল্কা বারবিশা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান। সুবলের কথায়, ‘‘প্রায় ২৫ বছর আগে আমার বোনের বিয়ে হয়েছে অসমে। এনআরসি-র খসড়া তালিকা প্রকাশের আগে তালিকায় বোনের নাম থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন নাম ওঠেনি। এর পর আমি নিজে অসমে গিয়ে বোনের সমস্ত কাগজপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করি। কিন্তু এত কিছুর পরেও এ দিনের তালিকায় ওর নাম আসেনি। ভয়ে, আতঙ্কে কান্নাকাটি করছে বোন। আমরাও উদ্বেগে রয়েছি।’’ সুবল আরও বলেন, ‘‘অসমে বিয়ে হয়ে যাওয়া আমাদের এখানকার অনেকের নামই এনআরসি-র তালিকায় ওঠেনি বলে জানতে পেরেছি।’’
ভল্কা বারবিশা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বর্তমান সদস্য কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘‘আমাদের এলাকার অনেক মেয়েরই অসমে বিয়ে হয়েছে। যাদের অনেকের বাপের বাড়ির লোকেদের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করি। খসড়া তালিকায় নাম না থাকলেও এ দিনের তালিকায় অনেকেরই নাম উঠেছে। আবার এমনও বেশ কয়েক জন রয়েছেন, যাঁদের নাম এ বারের তালিকাতেও নেই।’’ তবে সীমানা লাগোয়া এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে জানান কৃষ্ণবাবু। পাকড়িগুড়ি বিশ্বাসপাড়ার বাসিন্দা মন্টু বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমার বোনের অসমের গোয়ালপাড়ায় বিয়ে হয়েছে। এনআরসি-র খসড়া তালিকায় বোনের নাম ছিল না। দিনভর চেষ্টা করেও ফোনে যোগাযোগ করতে পারিনি। ফলে চূড়ান্ত তালিকায় ওর নাম রয়েছে কি না, সেটাই জানতে পারছি না।’’
এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হতেই আলিপুরদুয়ার জেলার অসম-বাংলা সীমানায় নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে সীমানা লাগোয়া এলাকা শান্ত রয়েছে বলে দাবি জেলার প্রশাসন ও পুলিশের কর্তাদের। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘আলিপুরদুয়ার জেলার অসম-বাংলা সীমানার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে। তবে সীমানায় নজর রাখছি।’’