উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার পুলিশকে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার পরেই রাজ্য জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছিল অভিযান। কোথাও ওই রাতেই অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। কোথাও শুক্রবার সকাল থেকে। এর পর বিভিন্ন জেলা থেকে উদ্ধার হতে শুরু করে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র।
আসানসোলের সালানপুর থানার রূপনরায়ণপুর ফাঁড়ির অন্তর্গত চিতালডাঙা এলাকার একটি বাড়ির ভিতরে অবৈধ অস্ত্র তৈরির কারখানার খবর গোপন সূত্রে পেয়ে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার ১২টি অসম্পূর্ণ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। পাওয়া গিয়েছে পিস্তল তৈরির সরঞ্জাম, লোহা কাটার যন্ত্র, লেদ মেশিন। ওই ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ওই বাড়ির মালিক চিত্তরঞ্জন এলাকার বাসিন্দা দীনেশ চৌধুরী, রাজকুমার চৌধুরী, পারবিন কুমার, এমডি ইকবাল। এই চার জনকেই শুক্রবার আদালতে তোলা হয়। ওই কারখানা থেকে তৈরি অস্ত্র কোথায় পাঠানো হত, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, দীনেশ রেলকর্মী।
হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের দাসনগর ও শিবপুর থানা এলাকাতেও অভিযান চালানো হয়েছে। তাতে উদ্ধার হয়েছে চারটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি। ওই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ছ’জনকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করেছে পুলিশ। ধৃতদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে পুলিশের তরফে।
নদিয়ার শান্তিপুর থানা এলাকাতেও অভিযান চালিয়ে দেশি রিভলভার, কার্তুজ, ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনায় ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, শ্যামল সিকদার, রাজীব শেখ ও সাবির শেখ নামে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবারই তাঁদের রানাঘাট মহকুমা আদালতে হাজির করা হয়। ওই অস্ত্র কোত্থেকে তাঁরা পেয়েছিলেন, কী কারণে তাঁদের কাছে অস্ত্র মজুত ছিল, ধৃতদের জেরা করে এই সমস্ত বিষয় জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। মুর্শিদাবাদের নওদা থানার পুলিশও আমতলা-বেলডাঙা রোড থেকে দুই ব্যক্তিকে অস্ত্র-সহ গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি নাইন এমএম পিস্তল, একটি ৭.৬৫ পিস্তল, দু’টি ম্যাগাজিন ও চার রাউন্ড গুলি। যে দু’জন গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁদের এক জন নওদা থানার সোনাটিকুরী গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর শেখ, অন্য জন নদিয়া জেলার আরংঘাটার বাসিন্দা প্রতীক মণ্ডল।
গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ
দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলাতেও বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান চালানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই বৃহস্পতিবার রাতে গোপন সুত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে দু’টি পাইপগান, দু’টি কার্তুজ-সহ দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে মালদহের চাঁচল থানার পুলিশ। চাঁচলের দু’টি পৃথক গ্রামে চালানো হয়েছিল ওই অভিযান। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতেরা হলেন চাঁচল ১ ব্লকের মতিহারপুর পঞ্চায়েতের বাকিপুরের বাসিন্দা মারুপ আলি (৩০) আর চাঁচল পঞ্চায়েতের পাহাড়পুর এলাকার বাসিন্দা অনুপ মালো (২০)। পুলিশ সূত্রই জানান, চাঁচল থানায় রুজু হওয়া একটি ডাকাতি মামলা অনুপের নাম রয়েছে। আইসি সুকুমার ঘোষ জানিয়েছেন, ধৃতদের শুক্রবার চাঁচল মহকুমা আদালতে হাজির করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাতে বীরভূমের রামপুরহাটে তৃণমূল শাসিত পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখকে বোমা মেরে খুন এবং পরে ওই রাতেই বগটুই গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িতে বোমাবাজি ও আট জনকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা গোটা রাজ্যে আলোড়ন ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বগটুই গিয়ে রাজ্য পুলিশকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, রাজ্যে যেখানে যত বেআইনি অস্ত্র বোমা রয়েছে, অবিলম্বে তল্লাশি চালিয়ে তা সব বাজেয়াপ্ত করতে হবে। পুলিশকে কড়া নির্দেশ দিয়ে মমতা এ-ও বলেন, ‘‘যে পুলিশ ফুর্তি করবে, তাদের থাকার দরকার নেই। কয়েক জন পুলিশের জন্য গোটা ডিপার্টমেন্টের বদনাম হবে, এটা আমি বরদাস্ত করব না।’’ মমতা কড়া বার্তা দেওয়ার পরেই গোটা রাজ্য জুড়়ে সক্রিয় হল পুলিশ।