বৈঠকের পর খুলে দেওয়া হল প্রকল্পের গেটের তালা। ছবি: সামসুল হুদা
পাওয়ার গ্রিড প্রকল্পের গেটে তালা পড়তেই সক্রিয় হল প্রশাসন। বুধবার তড়িঘড়ি হল বৈঠক। প্রশাসন জানাল, হিমঘর তৈরি-সহ বাকি দাবি খতিয়ে দেখা হবে। ভাঙড়ের জমি, জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি জানাল, বৈঠক সদর্থক। খুলল গেটের তালা। মঙ্গলবার, প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন সকাল থেকে তৈরি পরিস্থিতির বেরিয়ে এল আপাত সমাধান সূত্র।
পাওয়ার গ্রিড বিরোধী জমি আন্দোলনকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ভাঙড়ের কাশীপুর থানার নতুন হাট এলাকা। জমি আন্দোলনে মৃত্যু হয় আলমগির মোল্লা ও মফিজুল খানের। দীর্ঘদিন ধরে চলা সেই আন্দোলন সরকারিভাবে নানা আলাপ-আলোচনার পরে প্রত্যাহার করে নেয় জমি কমিটি। সেই সময় জমি কমিটির দাবি মেনে সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণের ১২ কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়। বিদ্যাধরী নদীর সংস্কার ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ, ওই এলাকায় একটি হিমঘর তৈরি, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ইউপিএ-সহ বিভিন্ন মামলা প্রত্যাহার করা, টোনা ঢিবঢিবা রাস্তা নির্মাণ- সহ এলাকার উন্নয়ন নিয়ে একাধিক বিষয়ে চুক্তি হয়। সরকারি চুক্তি অনুযায়ী সমস্ত দাবি পূরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ তোলে জমি কমিটি। হুমকি দেয় ফের আন্দোলনের। প্রশাসন জানিয়েছিল, অধিকাংশ দাবিই পূরণ হয়েছে। কিন্তু নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে জমি কমিটি। দাবি আদায়ে মঙ্গলবার সকালে পাওয়ার গ্রিডের গেটে তালা লাগিয়ে নতুন করে আন্দোলন শুরু করে জমি কমিটি। বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ভাঙড় ২ ব্লকের বিডিও কার্তিক চন্দ্র রায়, ডিএসপি(ক্রাইম) তমাল সরকার, সিআই ভাঙড় প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায়, ওসি সমরেশ ঘোষের নেতৃত্বে বাহিনী। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পরেও নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে জমি কমিটি। জমি কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মির্জা হাসান জানান, চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের বাকি টাকা এখনও দেওয়া হয়নি। ওভারহেড তারের নীচে যাদের জমি রয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হয়নি। পঞ্চায়েত এলাকায় ১০০ দিনের কাজ থমকে রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। বেশকিছু মামলা এখনও বিচারাধীন। অবিলম্বে সমস্ত দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন চলতে থাকবে। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনে হবে রাত পোহালে ফের শুরু হয় বৈঠকের তোড়জোড়। এ দিন আলিপুরে জেলা শাসকের দফতরে জমি কমিটির সঙ্গে আলোচনায় বসেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, জেলাশাসক পি উলগানাথন সহ প্রশাসনের কর্তারা। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি কমিটির দাবি মেনে আজ বৃহস্পতিবার পাওয়ার গ্রিড এলাকায় হিমঘর তৈরীর জন্য জমি দেখা সহ অন্যান্য বিষয়গুলি খতিয়ে দেখতে আসার কথা প্রশাসনের কর্তাদের। এছাড়া জমি কমিটির অন্যান্য দাবির বিষয় আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পুনরায় বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘ওদের হিমঘর তৈরি নিয়ে যে দাবি ছিল তা অনেকটাই মিটে গিয়েছে। ওদের দাবিগুলো আমরা বিবেচনা করছি। এক্ষেত্রে কিছু কাজ বাস্তবায়িত করতে সময় লাগছে। আমরা সবকিছু খতিয়ে দেখে সমস্যার সমাধান করব।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি কমিটির দাবি মেনে আজ বৃহস্পতিবার পাওয়ার গ্রিড এলাকায় হিমঘর তৈরির জন্য জমি দেখা সহ অন্যান্য বিষয়গুলি খতিয়ে দেখতে আসার কথা প্রশাসনের কর্তাদের। এছাড়া জমি কমিটির অন্যান্য দাবির বিষয় আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পুনরায় বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জমি, জীবিকা বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির মুখপাত্র অলীক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আজকের আলোচনা সভা সদর্থক হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে হিমঘর তৈরি সংক্রান্ত কাজের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জেলা প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছেন। আপাতত আমরা পাওয়ার গ্রিডের তালা খুলে দিয়ে অবস্থান-বিক্ষোভ তুলে নিলাম।তবে আমাদের অন্যান্য দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন চলতে থাকবে।’’