ধর্মতলায় শাহের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ।—ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সফরের দিনে বিক্ষোভ, প্রতিবাদের ছবি দেখা গেল শহর জুড়ে। কোথাও ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়ালেন বিক্ষোভকারীরা, কোথাও জ্বলল শাহের কুশপুতুল। তবে বড় ধরনের গোলমাল হয়নি কোথাও। এই প্রতিবাদের রেশ ধরে রেখেই আজ, সোমবার শান্তির ডাক দিয়ে মহামিছিলের ঘোষণা করেছে বাম ও কংগ্রেস।
জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের মতোই এ বার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাতে ‘গো ব্যাক শাহ’ স্লোগান নিয়ে রবিবার রাস্তায় নেমেছিল নানা সংগঠন। বিমানবন্দরের কাছে, ধর্মতলা, পার্ক সার্কাস ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে ছিল মূল বিক্ষোভ। পুলিশ অবশ্য শাহের যাতায়াতের পথে কোনও প্রতিবাদীকে নামতে দেয়নি। কালো পতাকা, কালো বেলুন নিয়ে দূর থেকেই ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
মোদীর মতোই শাহের সফরেও পুলিশের ‘অতি সক্রিয়তা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। সেই সঙ্গেই বিজেপির কর্মসূচির জবাব পথে নেমেই দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হলে দায় এসে পড়বে তাদেরই সরকারের উপরে, এই যুক্তি দিয়ে শাসক তৃণমূল অবশ্য এ দিন পথে নামেনি। পুলিশের সক্রিয়তা এবং তৃণমূলের ‘নিষ্ক্রিয়তা’র কথা বলেই বাম ও কংগ্রেস নেতা শাহের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বোঝাপড়ার অভিযোগ এনেছেন। তৃণমূলের তরফে তাপস রায় অবশ্য বলেন, ‘‘অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে বাম ও কংগ্রেস কাল্পনিক অভিযোগ করছে। সারা দেশে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।’’
সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘দেশের অনিষ্টমন্ত্রী বাংলায় এসে বিষ ঢেলে দিয়ে গিয়েছেন! বিষ ছড়ালে বিষ ঝাড়ার কাজ তাড়াতাড়ি করতে হয়। বামপন্থী, কংগ্রেস-সহ নানা দল কাল সেই উদ্দেশ্যে পথে নামবে। আরএসএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, এমন সব মানুষকেই আমরা মিছিলে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’’ রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে মধ্য কলকাতার নানা রাস্তা ঘুরে মহাজাতি সদন পর্যন্ত ওই মিছিল হবে দিল্লির হিংসার প্রতিবাদ ও শাহের ইস্তফার দাবিতে। বাম ও কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন আজ শহিদ মিনার ময়দানে ‘ভাইরাস মুক্তি অভিযান’ও করবে।
কলেজ স্কোয়ারে ছাত্র পরিষদ ও যুব কংগ্রেসের অবস্থান।—নিজস্ব চিত্র।
শাহ ও তাঁর দলকে বিঁধেই লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘দিল্লির মতো গোটা দেশকেই ওঁরা রক্তে রাঙাতে চান। গোটা দেশের মানুষের ওঁরা ‘জিজাজি’ হয়ে গিয়েছেন! সবাই নাকি ‘শালা’! সব ‘শালা’দের একজোট হয়েই এই ভয়ঙ্কর রাজনীতির প্রতিবাদ করতে হবে!’’ আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের অভিযোগ, ‘‘ভুবনেশ্বরে সেটিং-এর পরে আজ দিদি শাহকে রিটার্ন গিফ্ট দিলেন প্রতিবাদীদের হঠিয়ে!’’
বিমানবন্দরের ১ নম্বর গেটের বাইরে মোড়েই বাম সমর্থকদের এ দিন আটকে দেয় পুলিশ। পার্ক সার্কাস, শ্যামবাজার, এন্টালি, যাদবপুর-সহ নানা জায়গায় বিক্ষোভ দেখান বাম কর্মী-সমর্থকেরা। ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি সৌরভ প্রসাদের নেতৃত্বে এক দল বিক্ষোভকারী ধর্মতলায় ট্রাম লাইনে শুয়ে পড়েন। অন্য দিকে তখন শাহের কুশপুতুল পোড়ান এসইউসি কর্মীরা। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী ও প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি শাদাব খানের নেতৃত্বে এক দল প্রতিবাদী চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে ব্যারিকেড উল্টে দিলে ধস্তাধস্তি বাধে পুলিশের সঙ্গে। ডোরিনা ক্রসিংয়ে শাহের কুশপুতুল নিয়ে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখায় যুব লিগ। কলেজ স্কোয়ারে আবার রোহন মিত্র, অর্ঘ্য গণদের নিয়ে কংগ্রেসের যুব ও ছাত্রেরা ‘অমিত শাহের আসল রূপ দর্শন’ নামে অন্য রকমের প্রতিবাদে শামিল হন।