নির্যাতন মানে কেবল দৈহিক নির্যাতন নয়। একটি মেয়ের কথা মনে পড়ছে। খুব কম বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায়। দুটি সন্তান হয়। স্বামীর রোজগার কম বলে মেয়েটিকে যৌথ পরিবারে কাজ করতে হত বেশি। গালাগালও সহ্য করত। শেষে এক দিন মেয়েটিকে ‘পাগল’ বলে একটি নার্সিং হোমে ভর্তি করে দিল স্বামী। বাপের বাড়ির সাহায্যে ছাড়া পেয়ে সাংসারিক নির্যাতন আইনে (ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট, ২০১২) মেয়েটি কেস করল ব্যারাকপুর আদালতে। তাকে মাসে ৯০০০ টাকা খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দিল কোর্ট। মেয়েটি শ্বশুরবাড়িতে না ফিরলেও, সাংসারিক নির্যাতন আইনে মেয়েরা স্বামীর বাড়ির অংশে আলাদা থাকতে পারেন। যৌথ পরিবারে রফা হয়, মেয়েটি আলাদা থাকবে, বাড়ি ভাড়া দেবে তাঁর স্বামী।
৪৯৮ এ আইনে কেবল দৈহিক, মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করা যায়। খোরপোশ পেতে চাইলে অন্য ফৌজদারি ধারায় (১২৫ সিআরপিসি) মামলা করতে হয়। শ্বশুরবাড়িতে থাকার অধিকারও মিলবে না। অনেকে স্বামীকে চাপে ফেলে অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ৪৯৮এ ধারায় মামলা করেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের ২০১৪ সালের একটি রায়ের পরে, এখন ওই ধারায় মামলা করলেই পুলিশ গ্রেফতার করবে, এমন আর নয়। অভিযুক্তদের ডেকে পাঠিয়ে, জিজ্ঞাসাবাদ করে যথেষ্ট প্রমাণ পেলে তবে পুলিশ গ্রেফতার করে। যত দিন মামলা চলবে, স্বামীর বাড়িতে থাকা অসম্ভব। খোরপোশ মিলতেও সময় লাগে, কারণ ১২৫ ধারায় খোরপোশ মেলার নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। সাংসারিক নির্যাতন আইনে বলা আছে, অভিযোগ দায়েেরর সাত দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দেবে আদালত। দু’মাসের মধ্যে তার নিষ্পত্তি করতে হবে। তাই ক্রমশ এই ধারাটি অনেক মেয়ের কাছে সুবিধাজনক হয়ে উঠছে।