এক দল অপরাধ ও দুর্নীতির তদন্ত করবে। অন্য দল সেই অপরাধ ও দুর্নীতির থেকে আয় করা টাকা কোথায় গেল, তা খুঁজে বের করবে।
এই যুক্তিতেই সিবিআই ও ইডি একের পর এক তদন্তে একসঙ্গে মাঠে নামছে। চিট ফান্ড, কালো টাকার পর এ বার নারদ-কাণ্ড। ইডি মনে করছে, সিবিআইয়ের সঙ্গে কাজ করতে না পারলে সাফল্য পাওয়া মুশকিল। তাই সিবিআইয়ের পাশাপাশি আজ ইডি-ও তৃণমূলের এক ডজন নেতানেত্রীর বিরুদ্ধে আর্থিক নয়ছয় আইনে মামলা করেছে। উদ্দেশ্য, নারদ-ভিডিওতে তাঁদের যে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তার হদিস খুঁজে বের করা।
ইডি-র হাতে আইনি অস্ত্র দু’টি। আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইন এবং বিদেশি মুদ্রা আইন। আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইন চালু হয়েছিল ২০০২ সালে। ইডির ইতিহাস বলছে, গত ১৫ বছরে মাত্র দু’জনকে এই আইনে দোষী সাব্যস্ত করা গিয়েছে। আইন চালুর ৮ বছর পরে, ২০১০-এ ঝাড়খণ্ডে মধু কোড়ার দুর্নীতির তদন্তে প্রথম এই আইন প্রয়োগ করে ইডি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোড়া-সরকারের মন্ত্রী হরিনারায়ণ রাই দোষী সাব্যস্ত হন। সাত বছরের জেল হয়। এই আইনে ওটাই সর্বোচ্চ শাস্তি। এর পর গত মার্চে কলকাতায় ড্রাগ পাচারের অপরাধে শেখ আলাউদ্দিনের সাজা হয়েছে।
কী ভাবে কাজ
• সিবিআই প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকা কর্মীবর্গ মন্ত্রকের অধীনে
• ইডি অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব দফতরের অধীন
• ইডি-র অস্ত্র: আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইন, ২০০২
• অপরাধমূলক আয়ের টাকা কোথায় গেল, তার হদিশ
• ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা
• ১৫ বছরে আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইনে দোষী সাব্যস্ত ২ জন
সিবিআই কাজ করে কেন্দ্রের কর্মীবর্গ দফতরের অধীনে। যা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীন। কিন্তু ইডি কাজ করে অর্থ মন্ত্রকের রাজস্ব দফতরের অধীনে। নরেন্দ্র মোদী গুজরাত থেকে তাঁর আস্থাভাজন আইএএস হাসমুখ আঢ়িয়াকে দিল্লিতে নিয়ে এসে রাজস্ব সচিবের দায়িত্ব দেন। হাসমুখই ইডি-র সাফল্যের খরা কাটাতে সক্রিয় হন। ইডি-র ডিরেক্টর কার্নেল সিংহের সঙ্গে কথা বলে তিনি বুঝতে পারেন, সিবিআই ও আয়কর দফতরের মতো সংস্থাগুলির সঙ্গে ইডি-র সমন্বয় প্রয়োজন। সিবিআই ও আয়কর দফতরের তদন্তের ভিত্তিতেই ইডি-কে এগোতে হবে। তা হলেই অপরাধ, দুর্নীতি বা কর ফাঁকির কালো টাকা কোথায় যাচ্ছে, সেই ‘মানি ট্রেইল’ উদ্ধার করা সম্ভব। রাজস্ব দফতর সূত্রের বক্তব্য, একই কারণে নোট বাতিলের পরে পুরনো নোটে জমা করা কালো টাকার মালিকদের সন্ধানে আয়কর দফতরের পাশাপাশি সিবিআই, ইডি-কে নামানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:একা সিবিআইয়ে রক্ষা নেই, নারদে ইডি দোসর!
ইডি-র এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘এখনও পর্যন্ত তছরুপের অভিযোগে আমরা প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা আটক করেছি। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা অপরাধের টাকা বলে প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি।’’ প্রশ্ন হল, নারদ-তদন্তে কী তা সম্ভব হবে? ইডি-র একটি সূত্রের বক্তব্য, একেক জন তৃণমূল নেতা যে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ, তা খুবই কম। কয়েক লক্ষ নগদ টাকা কোথায় গেল, তা উদ্ধার করা আরও মুশকিল। ইডি-অফিসাররা অবশ্য আশাবাদী, সিবিআই-এর সাহায্য পেলে নারদেও সাফল্য মিলতে পারে।