এই বহুতলের প্রোমোটারকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
বেআইনি নির্মাণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া বার্তার পরেই হাওড়া পুর এলাকায় গ্রেফতার এক প্রোমোটার। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতের নাম সরফরাজ আনোয়ার। ধর্মদাস গাঙ্গুলি লেনে তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে।
হকারদের ‘দখলদারি’ নিয়ে বৃহস্পতিবার খানিক শিথিল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বার্তা দিয়েছেন, বিকল্প ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত আপাতত হকার উচ্ছেদ করা হবে না। এক মাসের সময়ও বেঁধে দিয়েছেন তার জন্য। কিন্তু সরকারি জমি, নিকাশি ও রাস্তা দখল করে যে অবৈধ নির্মাণ রয়েছে, তা নিয়ে প্রশাসন যে আগের মতোই কড়া, তা স্পষ্ট হয়ে গেল সরফরাজের গ্রেফতারিতে। পুলিশ সূত্রে খবর, শিবপুর থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছিল হাওড়া পুরসভার তরফে। তার ভিত্তিতেই গ্রেফতার হন প্রোমোটার। এ ছাড়াও আরও দু’টি নির্মাণ সংস্থার বিরুদ্ধে হাওড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। দু’টি নির্মাণই ৩০ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় রয়েছে। হাওড়ার পুরসভার পুর প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এ রকম আরও পদক্ষেপ করা হবে। বেআইনি নির্মাণ রুখতে জারি থাকবে এই ব্যবস্থা।’’
প্রসঙ্গত, গত বুধবার জমি দখলের অভিযোগে শিলিগুড়ির ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে এক তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে তা নিয়ে মমতা বলেন, ‘‘যে যত বড় নেতাই হোক, কাউকে ছেড়ে কথা বলছি না। স্থানীয় কাউন্সিলেরা চোখে দেখেও দেখে না। কাউন্সিলরেরা ভাবছে, টাকা নিলাম আর দিয়ে দিলাম। যে নেতা-কাউন্সিলরের এলাকায় এমন হবে, তাঁকে গ্রেফতার করা হবে। ডাল-ভাত-মাছে সন্তুষ্ট হওয়া যাচ্ছে না? স্থানীয়-পুলিশ, নেতা সবাই দায়ী। প্রথমে বসাচ্ছে, তার পর বুলডোজ়ার নিয়ে উচ্ছেদ করতে যাবেন, এটা মানি না।’’
শুধু হাওড়ায় গ্রেফতারিই নয়, বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ জারি অন্যান্য জায়গাতেও। হুগলির বৈদ্যবাটি পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিবেদিতা পল্লি এলাকায় একটি বহুতল ভেঙে ফেলার নোটিস দিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সূত্রে খবর, পাঁচ তলা বাড়ির নকশা পাশ করিয়ে ছ’তলা বাড়ি তৈরি হচ্ছে। স্থানীয়েরা এই অভিযোগ করেছিলেন। তাঁরা জানিয়েছিলেন, আবাসনের ছাদের শেড ভেঙে এক বার এক নির্মাণকর্মী জখম হয়েছিলেন। বাড়িটি যে ভাবে তৈরি হচ্ছে, তাতে যে কোনও সময় বড় বিপদ হতে পারে। পুরসভা সূত্রে খবর, এর পরেই পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার আবাসনে গিয়ে মাপজোক করেন। প্রোমোটার বালকৃষ্ণ সাউকে নোটিস ধরানো হয়েছে। নকশা- বহির্ভূত অংশ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি তা না হয়, তা হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।
বৈদ্যবাটি পুরসভার পুরপ্রধান পিন্টু মাহাত বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের অভিযোগ পাওয়ার পরেই ইঞ্জিনিয়ার পাঠিয়েছিলাম। সেখানে দেখা গিয়েছে, প্ল্যান-বহির্ভূত নির্মাণ হয়েছে। তাই যতটুকু অংশ বেআইনি ভাবে করা হয়েছে, সেটাকে ভেঙে ফেলতে হবে। সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে ওই প্রোমোটারকে। সাত দিন পরে গিয়ে দেখা হবে। যদি কথা না শোনেন, তা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ প্রোমোটার বালকৃষ্ণের দাবি, ‘‘উনি কোনও বেআইনি নির্মাণ করেননি। পুরসভায় যে প্ল্যান পাশ করিয়েছিলেন, সেই অনুযায়ী নির্মাণ হয়েছে। আমি পুরসভা থেকে কোনও চিঠিও পাইনি।’’