২৪ ঘণ্টা পর অবস্থান তুলে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি অধীর চৌধুরী। নিজস্ব চিত্র।
মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিডিও অফিসের সামনে থেকে অবস্থান বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার ‘অনুরোধ’ করে লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরীকে ফোন করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। যদিও বুধবার বিকেলে রাজ্যপালের ফোনের পরেও ‘হাত’ প্রতীক ফেরানোর দাবিতে অনড় ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাই কোর্ট বড়ঞার কংগ্রেস প্রার্থীদের প্রতীক (‘বি ফর্ম’) জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর ধর্না প্রত্যাহার করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর।
কংগ্রেস প্রার্থীর হাত থেকে ফর্মভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার বিকেল ৪টেয় মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞায় বিডিও অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। বুধবার দুপুরে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন। তিনি যে পিস রুম (শান্তিকক্ষ) খুলেছেন, সেখানে অভিযোগ জানানোর জন্য বলেছেন। রাজ্যপাল আশ্বাস দিয়েছেন, অভিযোগ জানালে তিনি নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেবেন সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হওয়ার জন্য।’’
প্রতীক ছিনতাই নিয়ে হাইকোর্টেও কংগ্রেসের তরফে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়ে অধীর বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ দেখে ধর্নার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ এর কিছু ক্ষণ পরেই কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দেয়, কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাহারায় বড়ঞার কংগ্রেস প্রার্থীদের ফর্ম জমার বন্দোবস্ত করতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। এর পরেই বিডিও অফিস চত্বরে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের উৎসব শুরু হয়ে যায়। অবস্থান তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন অধীর।
প্রসঙ্গত, শাসকদলের সন্ত্রাসের পাশাপাশি স্থানীয় বিডিওর বিরুদ্ধেও পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ তুলেছেন অধীর। ওই বিডিও তাঁর সঙ্গে ‘অভব্য আচরণ’ করেন বলে অভিযোগ তাঁর। এ বিষয়ে চিঠি লিখেছেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে। সংবিধান বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এ ক্ষেত্রে লোকসভার স্পিকার মনে করলে সংসদের স্বাধিকার রক্ষা কমিটির কাছে বিষয়টি পাঠাতে পারেন। স্বাধিকার রক্ষা কমিটি প্রয়োজনে ওই বিডিওকে তলব করে জবাবদিহির নির্দেশ দিতে পারে। এমনকি, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের সুপারিশ করতে পারে রাজ্য সরকারের কাছে।
স্পিকারকে পাঠানো চিঠিতে অধীর লিখেছেন, “মুর্শিদাবাদের মানুষের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে মঙ্গলবার বিকালে পঞ্চায়েতে মনোয়ন জমা দেওয়া নিয়ে হিংসা এবং কংগ্রেস প্রার্থীর হাত থেকে ফর্ম কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে বিকেল ৪টের সময় বড়ঞা বিডিও অফিসের সামনে ধর্নায় বসি। সেই কর্মসূচি চলাকালীন বিডিও এক বারও দেখা করার প্রয়োজন মনে করেননি বা কী বিষয়ে আমরা অবস্থান বিক্ষোভে বসেছি সে বিষয়ে জানার চেষ্টাও করেননি। এই প্রখর গরমে আমাদের নিজেদের পাখার ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হয়েছে। এক গ্লাস জল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি বিডিও অফিসের তরফ থেকে।”
স্পিকারের কাছে লোকসভার ‘পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি’র চেয়ারম্যান অধীর আর্জি জানিয়েছেন, কমিটি গঠন করে ওই বিডিওর বিরুদ্ধে যেন পদক্ষেপ করা হয়। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘ওই বিডিওকে আমি দিল্লি নিয়ে যাব। চিন্তা নেই।’’ তাঁর অভিযোগ ১৪৪ ধারার যুক্তি দেখিয়ে ওই বিডিও তাঁর দফতরের চত্বরে অবস্থানকারীদের ফ্য়ান ও জেনারেটর ব্যবহার করতে দেননি। এমনকি, পানীয় জল আনতেও বাধা দিয়েছেন।