মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
নির্বাচনী ফলের ভিত্তিতে এই মাসে ‘শহিদ দিবসে’র কর্মসূচি সেরে দল ও প্রশাসনে কিছু রদবদলে হাত দিতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস। আগামী বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এই বদল প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হচ্ছে। দলীয় সূত্রে খবর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মতবিনিময় করে আগামী অগস্ট মাসের মধ্যে এই বদলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সূত্রে রদবদল করা হতে পারে পঞ্চায়েত, পুরসভা এবং রাজ্য মন্ত্রিসভাতেও।
নবীন-প্রবীণ নয়। দল ও স্থানীয় প্রশাসনে এ বার ‘কাজের লোক’ বাছাই করতে চলেছেন তৃণমূল নেত্রী। ভোটের হিসেবে রাজ্যে বড় সাফল্য পেলেও কিছু জায়গায় সাংগঠনিক খামতি ইতিমধ্যে চিহ্নিত করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সাধারণ ভাবে শহরাঞ্চলের ভোটে ক্ষয় হলেও বাকি রাজ্যের বহু জায়গায় জনসমর্থনের ‘স্বতঃস্ফূর্ততা’ বিচার করে খুব একটা আশ্বস্ত হতে পারছেন না তাঁরা। তাই বিধানসভা ভোটের আগেই এই সব জেলা ও অঞ্চলে সাংগঠনিক নেতৃত্বে নতুন মুখ আনতে দলের শীর্ষ স্তরে আলোচনা চলছে। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘শহরাঞ্চলে ভোট কমেছে। গ্রামাঞ্চলে তা না হলেও সাংগঠনিক দুর্বলতা সেখানেও রয়েছে। সরকারি প্রকল্পের সুবিধা আর তাৎক্ষণিক কিছু পদক্ষেপে ভোটের ক্ষয় এড়ানো গেলেও সংগঠন মেরামতির প্রয়োজন রয়েছে।’’
এই রদবদলের ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ আলাদা ভাবে নজরে রয়েছে তৃণমূলের। কোচবিহার লোকসভা আসনটি জিতে দল কিছুটা স্বস্তি পেলেও সামগ্রিক ভাবে বাকি আসনগুলিতে খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। তাই সে সব এলাকায় সংগঠন নিয়ে কয়েক দফায় পর্যালোচনা করে রদবদলের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। স্থানীয় স্তরে নেতৃত্ব বদলের পাশাপাশি রাজ্য থেকে কী ধরনের ‘পর্যবেক্ষণ’ রাখা যায়, তা নিয়েও ভাবনা-চিন্তা হয়েছে। দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ বারের লোকসভা ভোটে এমন কিছু আসনে তৃণমূল জিতেছে, তাতে তার অন্তর্গত সব বিধানসভা আসনে তারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারছে না। আবার দক্ষিণবঙ্গে এমন লোকসভা আসন রয়েছে, যেখানে দল হেরে গেলেও তার অন্তর্গত বিধানসভা আসনগুলির উপযুক্ত পরিচর্যার প্রয়োজন মনে করছে তারা। তাতে বিধানসভা ভোটে তুলনায় ভাল ফল হতে পারে বলেই ধারণা তাদের।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই তৃণমূল কাজের মূল্যায়নের স্লোগান দিয়েছিল। পঞ্চায়েতের দায়িত্ব নেওয়ার মাসছয়েক পর থেকে তার মূল্যায়নও শুরু করেছিল তৃণমূল। বিশেষত, প্রধান, সভাপতি এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতি এবং কর্মাধ্যক্ষ স্তরে সেই মূল্যায়নও এই রদবদলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হতে পারে। সেখানেও কাজের নিরিখে দায়িত্ব বদল করার চর্চা রয়েছে দলের অন্দরে।
দলীয় সূত্রে খবর, আপাতত চারটি বিধানসভা উপনির্বাচন ও ২১শে জুলাইয়ের সমাবেশের আয়োজনেই ব্যস্ত তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই সাংগঠনিক স্তরে সেই প্রস্তুতি দেখতে জেলায় ঘুরছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। এই কর্মসূচির পরেই সামগ্রিক এই রদবদলে হাত দিতে পারেন মমতা।