কোথায় করোনা-আতঙ্ক! মাস্ক নেই কারও মুখে। সবুজসাথীর সাইকেল নিয়ে এ ভাবেই বাড়ির পথে ছাত্রীরা। ধুবুলিয়ায়। ছবি: প্রণব দেবনাথ
প্রায় এগারো মাস পরে কাল, শুক্রবার খুলছে স্কুল। শিক্ষা দফতরের কোভিড বিধি মেনে স্কুলে আসার কথা নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের। শুরু হওয়ার কথা দ্বাদশ শ্রেণির প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাসও।
ইতিমধ্যেই স্কুল পরিষ্কার করে তা স্যানিটাইজ় করার কাজে ব্যস্ত স্কুল শিক্ষক ও কর্মীরা। পড়ুয়াদের জানানো হয়েছে, মাস্ক পরে স্কুলে আসা বাধ্যতামূলক। এ দিকে শিক্ষকদের একাংশ আবার জানিয়েছেন, শিক্ষা দফতরের পাঠানো কোভিড-বিধি মেনে স্কুল খুলতে গিয়ে কিছু সমস্যারও সৃষ্টি হতে পারে।
যে-সব স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি, সেখানে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ানোর রুটিন করতে সমস্যা হচ্ছে। কোচবিহার মনীন্দ্রনাথ হাজরা স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক বীরেশ রায় জানান, তাঁদের স্কুলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ার সংখ্যা কমপক্ষে ১২০০। কোভিড বিধি মানলে, সবাইকে প্রতিদিন স্কুলে আনা সম্ভব নয়। পর্যায়ক্রমে পড়ুয়ারা এলেও কোভিড বিধি মেনে ছ’ফুট দূরত্বে সব পড়ুয়াকে এক একটি সেকশনে বসানো খুবই কঠিন। বীরেশবাবু বলেন, ‘‘আমাদের ছোট ছোট ক্লাসরুমে কোভিড বিধি মানলে চার-পাঁচটির বেশি বেঞ্চ রাখা সম্ভব নয়। পাঁচটা বেঞ্চে ২০ জনের বেশ পড়ুয়াকে বসানো যাবে না। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস না-হওয়ায় ওই ক্লাসরুমগুলো ব্যবহার করলেও পর্যাপ্ত ক্লাসরুম পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও চিন্তায় আছি।’’
নদীয়ার ঘোষপাড়া সরস্বতী ট্রাস্ট এস্টেট বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রতিটি শ্রেণিকে অনেকগুলো সেকশনে ভাগ করলে, এত শিক্ষক পাওয়া মুশকিল। এখন নবম থেকে দ্বাদশের রুটিন তৈরি করাটাই একটা চ্যালেঞ্জ।’’ আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত সব স্কুল এখনও পুরোপুরি সারানো হয়নি। ফলে ক্লাসরুমের সমস্যা হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার শতল কলসা হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক পুলক বসু বলেন, ‘‘আমপানে স্কুলের প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল। কিছু ক্লাসরুম সারানো হয়েছে। সেই কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলির অনেকগুলোই এখন ব্যবহার করা যাবে না।’’
কলকাতা ও শহরতলির স্কুলগুলোর ক্ষেত্রেও পর্যাপ্ত ক্লাসরুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে, দাবি শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর মতে, ‘‘আলিপুর মাল্টিপারপাস স্কুল, উত্তর পাড়া স্কুলে আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর সারানোর কাজ শুরু করেছে পূর্ত দফতর। সেই কাজ স্কুল শুরু হওয়ার আগে শেষ হলে ভাল হতো।’’
শিক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন, নবম থেকে দ্বাদশের শিক্ষকদের স্কুলে এসে ক্লাস নিতে হলে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির অনলাইন ক্লাস করার সময় পাবেন তো? কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স এন্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাসের মতে, ‘‘যারা মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক দেবে তাদের এই স্বল্প সময়ে গতানুগতিক ক্লাস না করিয়ে প্রশ্নভিত্তিক পাঠদান ও প্রাক্টিক্যাল ক্লাস করালে ক্লাসরুমের সমস্যা কিছুটা মিটতে পারে। সেই
সঙ্গে স্কুলে স্যানিটাইজ়িং এর কাজ শুরু হয়ে গেলেও অনেক স্কুলেই পর্যাপ্ত ঝাড়ুদার নেই।’’