সাঁওতালি মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের দাবিতে জেলায় জেলায় বিক্ষোভে শামিল আদিবাসী সংগঠন। নিজস্ব চিত্র।
সাঁওতালি মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের দাবিতে জেলায় জেলায় বিক্ষোভে শামিল আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। বুধবার সকাল থেকে তারা পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেছে। ১২ ঘণ্টা অবরোধ চলবে বলে জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
পৃথক সাঁওতালি শিক্ষা বোর্ড গঠন, সাঁওতালি মাধ্যমে শিক্ষা পরিকাঠামোর উন্নয়ন-সহ একাধিক দাবি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছিল ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। তারা এ-ও জানিয়েছিল, সমস্যার সমাধান না হলে আন্দোলনের পথে নামবে তারা। সেই মতো বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় ‘চাক্কা জ্যাম’। অবরোধ চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
আন্দোলনরত আদিবাসী সংগঠনটির মূল দাবিগুলি হল, সাঁওতালি মাধ্যমের স্কুলগুলিতে অবিলম্বে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ, ‘ভলান্টারি’ শিক্ষকদের পার্শ্বশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, প্রত্যেকটি জেলায় সাঁওতালি মাধ্যমে কলেজ স্থাপন, সাঁওতালি মাধ্যমের স্কুলগুলিতে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ এবং সঠিক সময়ে পাঠ্যপুস্তক প্রদান। এ ছাড়া, সাধু রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ে অবিলম্বে সাঁওতালি মাধ্যমে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি কোর্স চালু করার দাবিও জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। একই সঙ্গে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাঁওতালি নাচ ও গানের কোর্স চালু করার দাবিও উঠেছে।
ঝাড়গ্রাম জেলার প্রত্যেকটি ব্লকে অবিলম্বে সাঁওতালি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করার দাবি জানিয়েছে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া আদিবাসী হস্টেল চালু করা, ভুয়ো তফসিলি জাতি ও উপজাতির সংশাপত্র অবিলম্বে চিহ্নিত করে বাতিল করা। ডেউচা-পাঁচামিতে কয়লা খনির জন্য আদিবাসীদের উচ্ছেদের বিরোধিতাও করে তারা।
এ প্রসঙ্গে পারগানা মহলের নেতা রাইসেন হাঁসদা বলেন, ‘‘২০০৮ সাল থেকে সাঁওতালি মাধ্যমে পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত পৃথক কোনও সাঁওতালি শিক্ষা বোর্ড নেই। এই ভাষায় শিক্ষার কোনও সঠিক পরিকাঠামো নেই। কোথাও স্কুলের ভবন নেই, কোথাও আবার শিক্ষক নেই। যার জন্য পঠনপাঠনে ব্যাঘাত ঘটছে। সে কারণেই আমরা রাজ্য জুড়ে পথ অবরোধের ডাক দিয়েছি।’’
আদিবাসী সংগঠনের এই ‘চাক্কা জ্যাম’ কর্মসূচিতে বুধবার জেলায় জেলায় বিপর্যস্ত যান চলাচল। পশ্চিম মেদিনীপুরের ক্ষিরপাই হালদার দিঘি মোড়, দাসপুর, চন্দ্রকোণা রোড, গড়বেতা, কেশপুর, ডেবরা, ঝাড়গ্রামের খড়িকামাথানি, গোপীবল্লভপুরের হাতিবাড়ি মোড়, ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ফেকো, ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক গজাশিমূল প্রভৃতি এলাকায় রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে। পুরুলিয়ার নেতুরিয়া ব্লকের হরিডি, সাঁতুড়ি ব্লকের বেনাগড়িয়া, হুড়া ব্লকের লালপুর, মানবাজারের সিধু কানুহু মোড়ের মতো সড়ক পরিবহণের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে রাস্তায় বসে পড়েছেন অবরোধকারীরা। যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে বাঁকুড়া-রানিগঞ্জ ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর বড়জুড়ি, হেভির মোড়-সহ একাধিক এলাকায়। একইসঙ্গে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে দুর্গাপুরের পানাগড় মোড়গ্রাম হাইওয়ে এবং ডিভিসি মোড়ের ২ নম্বর জাতীয় সড়কের সার্ভিস রোডেও। আদিবাসীদের বিক্ষোভে অবরুদ্ধ হয় হুগলির খন্যানের চৌমাথাও।
সংগঠনের আর এর নেতা বিপ্লব সোরেন বলেন, ‘‘আমাদের দাবিগুলি নিয়ে আমরা বার বার প্রশাসন, রাজ্য সরকার, এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু কোনও দাবি পূরণ হয়নি। আমরা অবহেলা ও চূড়ান্ত বঞ্চনার শিকার। জঙ্গলমহলকে এ রাজ্যের পরিচালকেরা উপনিবেশ মনে করেন। সে কারনেই আমাদের এই আন্দোলন।’’ দাবি পূরণ না হলে আগামী দিনে আরও বড় আন্দোলনের পথে হাঁটার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।