ছবি: সংগৃহীত।
বাংলার কংগ্রেসে ঐক্য রাখার চেষ্টায় এ বার নতুন ভাবনা চলছে এআইসিসি-র অন্দরে। প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন সভাপতি বাছাইয়ের সঙ্গেই বিভিন্ন দায়িত্বে অন্য নেতাদের এনে প্যানেল ঠিক করে দিতে পারে এআইসিসি। সে ক্ষেত্রে বাকি নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দল চালাতে হবে নতুন সভাপতিকে।
রাজ্যে দল এখন বেহাল। সামনের বিধানসভা ভোটে উজ্জ্বল ফলাফলের আশা দেখা যাচ্ছে, এমনও নয়। তার উপরে, প্রদেশ সভাপতি হলে দৈনন্দিন ভিত্তিতে দল চালানোর তহবিল জোগাড়ের প্রশ্ন আছে। এতদ্সত্ত্বেও নতুন সভাপতি বেছে নেওয়ার কাজ খুব মসৃণ হচ্ছে না কংগ্রেসে! প্রথম আলোচনায় স্বাভাবিক ভাবেই অধীর চৌধুরী, প্রদীপ ভট্টাচার্য ও আব্দুল মান্নানের নাম এসেছিল। তার পরেও নানা রকম তদ্বির চলছে, সক্রিয় হয়েছেন আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী, শঙ্কর মালাকার, নেপাল মাহাতোরা। আর নিরাসক্ত প্রতিক্রিয়া দিয়েও প্রাক্তন মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি বলেছেন, দল দায়িত্ব দিলে তিনি পালনে তৈরি।
এই পরিস্থিতিতে ভেবেচিন্তে এগোতে হচ্ছে এআইসিসি-কে। কংগ্রেসের সাম্প্রতিক ইতিহাস বলছে, অধীরবাবু বা সোমেন মিত্র যে যখন সভাপতি থেকেছেন, দু-এক জন দল-অন্তঃপ্রাণ নেতা বাদে বাকিরা তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করেননি। ফের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতেই বিভিন্ন নেতাকে নানা দায়িত্বে আনার ভাবনা। তবে গোটা বিষয়টি চূড়ান্ত হবে রাহুল গাঁধীর মতামত সাপেক্ষে।
এক ব্যক্তি, এক পদের সাধারণ প্রথার নিরিখে দেখলে অধীরবাবু বা মান্নানের প্রদেশ সভাপতি হওয়া অসুবিধাজনক। কিন্তু যথাক্রমে লোকসভা ও বিধানসভায় বর্তমান পদে থেকে তাঁরা বিধান ভবনের দায়িত্ব পেলে খরচ চালানোর ক্ষেত্রে কিছু সুরাহা মিলবে। অধীরবাবু বা মান্নান অবশ্য এই নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও আলোচনা করছেন না।
প্রাথমিক কথাবার্তার পরে এআইসিসি-র দুই প্রতিনিধি দিল্লিতে অধীরবাবুর সঙ্গে দেখা করে বিশদে আলোচনা সেরেছেন। প্রথমে অধীরবাবু তাঁদের বলেছন, তিনি যে হেতু এক বার সভাপতি হয়েছেন, এখন অন্য কাউকে সুযোগ দেওয়া হোক। তিনি প্রদেশ কংগ্রেসের কাজে সহযোগিতা করতে তৈরি। দলীয় সূত্রের খবর, সভাপতির উপরে আস্থা রেখে কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট একটা সময়ও যাতে দেওয়া হয়, সেই কথাও বলেছেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা। দু’বছর আগে প্রদেশ সভাপতি পদে সোমেনবাবুর নিয়োগ ও তাঁকে সরানোর খবর অধীরবাবু পেয়েছিলেন সাংবাদিকের ফোনে! এখন আবার পদে প্রত্যাবর্তন ঘটলে সে ‘আঘাত’-এর খানিক প্রশমন হবে, এমনই মনে করছে দলের একাংশ। আর অধীরবাবুর মতে, ‘‘সভাপতি যিনি হন, কাজের সূত্রেই কিছু নেতা-কর্মীর সঙ্গে তাঁর সখ্য তৈরি হয়। আমার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল। পরবর্তী কালে তাঁরা দলে কোণঠাসা হয়েছেন, কেউ কেউ বীতশ্রদ্ধ হয়ে বিজেপিতে গিয়েছেন। এই রেওয়াজ বন্ধ হওয়া দরকার।’’
তিনি নিজে কি আবার দায়িত্ব নিতে তৈরি? অধীরবাবু বলছেন, ‘‘নিজের জন্য আমি কখনও দরবার করতে যাইনি। রেলের মন্ত্রী, প্রদেশ সভাপতি বা লোকসভার নেতার দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। এখন সনিয়া গাঁধী বা রাহুল গাঁধী আবার কোনও দায়িত্ব দিলেও দলের সৈনিক হিসেবে তা পালন করব।’’
একই অবস্থান দীপারও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি কোনও দিনই কোনও পদের জন্য দৌড়ে নেই! কিন্তু কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব যা দায়িত্ব যখন দিয়েছেন, পালন করেছি। এখনও তা-ই করব।’’ অধুনা দিল্লির বাসিন্দা দীপার মতামতও নিয়েছে এআইসিসি। বাংলায় দায়িত্ব পেলে সে ক্ষেত্রে কলকাতা-বাসে গুরুত্ব দিতেও তৈরি রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ। মান্নান ও প্রদীপবাবুও বলছেন, দল যা ঠিক করবে, তা-ই তাঁরা মেনে চলবেন।