অধীর রঞ্জন চৌধুরী, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে স্বাগত জানাল কংগ্রেস। শাসকদল তৃণমূল মনে করছে নিরাপত্তার ওজর তুলে আসলে রাজ্যের মানুষকে ভয় দেখাতে চাইছে বিজেপি। বিজেপি অবশ্য জানিয়েছে, এতে তাদের কোনও হাত নেই, তারা নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। কমিশনই বাহিনী পাঠিয়েছে।
শনিবার থেকেই রাজ্যের জেলায় জেলায় আসতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। রবিবার সকাল থেকে হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুরের একাধিক এলাকায় রুট মার্চও করেছে তারা। রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর এই টহলদারি প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, রাজ্যের নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়, সে জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা দরকার ছিল। তবে শুধু ফৌজ দেওয়া মানেই সুষ্ঠু ভোট নয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ভোটদাতাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও সুনিশ্চিত করতে হবে। অধীর বলেন, ‘‘রাজ্যে এমন অনেক বুথ আছে আছে যেখানে এজেন্টদের বসতে দেওয়াই হয় না। ভোট লুঠ হয়। তা ছাড়া প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার এঁরা সব সরকারি দলের লোক। সুষ্ঠু নির্বাচন করাতে হলে নির্বাচন কমিশনের পাঠানো কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ত্রিমুখী শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। সেটা তারা কতটা পারবে সেটাই এখন দেখার।’’
শনিবার দু’ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী পৌঁছেছিল হাওড়া-সহ রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায়। রবিবার সকাল থেকে একে একে উলুবেড়িয়া, গ্রামীণ হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় রুট মার্চ শুরু করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। অথচ রাজ্যে ভোটের দিনক্ষণই ঠিক হয়নি এখনও। তার আগে এ ভাবে রাজ্যের জেলায় জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল নিয়ে প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের মন্ত্রী ও সাংসদরা। তাঁদের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনকে সামনে রেখে আসলে বিজেপিই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে রাজ্যবাসীকে ভয় দেখাচ্ছে।
রবিবার ডোমজুড়ে সভা ছিল রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়ের। কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল নিয়ে তিনি বিজিপিকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘অবাধ ও শান্তিপূর্ন নির্বাচন তৃণমূলও চায়। তবে রাজ্যে যখন কোনও অশান্তি নেই, তখন কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আসার যুক্তি কী? বিজেপি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে এসে মানুষের মধ্যে অকারণ ভীতি সঞ্চার করতে চাইছে।’’
শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টতই বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন। কল্যাণ বলেছেন, ‘‘যদি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে থাকে, তবে তার অফিশিয়াল অর্ডার কোথায়? আর যদি তা না থেকে থাকে, তবে কি অমিত শাহের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী এল রাজ্যে?’’ কল্যাণের প্রশ্ন, ‘‘নির্বাচন কমিশন কি তাহলে তাদের আয়ত্তের বাইরে গিয়ে কাজ করেছে?’’ কল্যাণ বলেন, কেন্দ্র তাদের বাহিনীকে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে রুট মার্চ করাচ্ছে এবং তারা এটা দেখাতে চাইছে যে এখানে কোনও রাজনীতিকরণ নেই। কিন্তু আদপে তা নয়। ‘‘আমার মতে, রাজ্য সরকারই আসলে মহত্ত্বের পরিচয় দিয়েছে।’’
তৃণমূলের এই আক্রমণের জবাব দিয়েছেন সদ্য তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার ডোমজুড়ে তাঁরও সভা ছিল। সেখানে তাঁর সভায় তাঁর সামনেই ‘খেলা হবে’ গান চালিয়ে দেন তৃণমূল সমর্থকরা। রাজীব তৃণমূলকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘ওরা বলেছে ‘খেলা হবে’। এতে স্পষ্ট যে সাধারণ মানুষকে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়া হবে। আর এটা আমরা চাই না।’’ রাজীব জানিয়েছেন, তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবি রেখেছিলেন। কারণ বিগত বছরে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়নি। সে কথা মাথায় রেখেই আগাম সতর্ক হওয়ার কথা ভেবেছিলেন তাঁরা। তারই প্রেক্ষিতে কমিশন ব্যবস্থা নিয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়েছে। রবিবার ডোমজুড়ে রাজীবের উদ্দেশে ‘গো-ব্যাক’, ‘দূর হটো’ স্লোগান দেন সেখানকার তৃণমূল সমর্থকরা। তবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ইস্যুতে রাজীবের সুরেই কথা বলেছেন অধীর।