দশ মাস ধরে সপ্তাহে এক দিন ‘অতিরিক্ত পোষণ’ দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে শিক্ষা দফতর সূত্রে। ফাইল চিত্র।
গরমে ৩২ দিনের অতিরিক্ত ছুটিতে মিড-ডে মিলের অভাবে স্কুলের পড়ুয়াদের পুষ্টি-ঘাটতি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে সোমবার বাংলার অন্তত তিনটি অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছুটা সুখবর মিলেছে। জঙ্গলমহল, সুন্দরবন ও ডুয়ার্স এলাকায় গরমের ছুটির পরে স্কুল খুললে পরবর্তী ৪২ সপ্তাহ অর্থাৎ কমবেশি দশ মাস ধরে সপ্তাহে এক দিন ‘অতিরিক্ত পোষণ’ দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে শিক্ষা দফতর সূত্রে। বাড়তি পোষণ মানে সপ্তাহে এক দিন ডিম বা ফল অথবা দু’টিই দেওয়া হবে। মিড-ডে মিল কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের যৌথ প্রকল্প, তাই কেন্দ্রীয় অনুমোদন নিয়েই এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে।
রাজ্যের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ প্রান্তের ওই তিন অঞ্চলের পড়ুয়াদের বাড়তি পুষ্টির ব্যবস্থায় স্বস্তির সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে উঠছে কিছু প্রশ্নও। মূল প্রশ্ন, কেন শুধু সুন্দরবন, জঙ্গলমহল ও ডুয়ার্সের জেলাগুলিতে অতিরিক্ত পোষণ দেওয়া হচ্ছে? অন্যান্য জেলার ছাত্রছাত্রীরা তা পাবে না কেন? শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, রাজ্যে মিড-ডে মিলের পরিস্থিতি পরিদর্শনের জন্য কয়েক মাস আগে কেন্দ্র থেকে যে-দল এসেছিল, তারা রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করে দেখেছে, সুন্দরবন, জঙ্গলমহল ও ডুয়ার্সের পড়ুয়াদের পুষ্টি-মাত্রা অন্য এলাকার পড়ুয়াদের থেকে অনেক কম। তাই এই সিদ্ধান্ত।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের আশঙ্কা, মিড-ডে মিল এবং সেই সূত্রে পড়ুয়া-পুষ্টি নিয়ে এ ভাবে এলাকা ভাগাভাগির জেরে ক্ষোভের সঞ্চার হতে পারে। বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হণ্ডা বলেন, “বাকি জেলাগুলির স্কুলেও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে আগামী ৪২ সপ্তাহ অতিরিক্ত পোষণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। সরকারি, সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে বেশির ভাগই গরিব পড়ুয়া পড়ে। সেখানে অতিরিক্ত পুষ্টি নিয়ে ভাগাভাগি অনুচিত।”
মিড-ডে মিল বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রের অনুমোদনের অভাবে এ বার গরমের অতিরিক্ত ছুটিতে স্কুলপড়ুয়াদের মিড-ডে মিল দেওয়া যায়নি। কেন্দ্র জানিয়েছে, ‘স্কুল সিকিয়োরিটি অ্যাক্ট’ বা স্কুল সুরক্ষা নীতি অনুযায়ী পড়ুয়ারা মিড-ডে মিল তখনই পাবে, যখন বিদ্যালয় খোলা থাকবে। করোনাকালে অতিরিক্ত গরমের ছুটিতে মিড-ডে মিল দেওয়া হয়েছিল, কারণ তখন অতিমারি পরিস্থিতি চলছিল। কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রশ্ন তুলছেন, গরমের অতিরিক্ত ছুটিতে মিড-ডে মিল না-দেওয়ার ক্ষেত্রে এই যুক্তি বা কারণের কথা শিক্ষা দফতর আগে কেন জানায়নি কেন? মিড-ডে মিল প্রকল্পে খরচের ভাগাভাগিতে ৬০ শতাংশ দেয় কেন্দ্র, রাজ্য দেয় বাকি ৪০ শতাংশ। গরমের বাড়তি ছুটিতে রাজ্যের ৪০ শতাংশ থেকে মিড-ডে মিলের নানা সামগ্রী তো পড়ুয়াদের দেওয়াই যেত।