অধিকার কী জানেনই না অ্যাসিড আক্রান্তরা

দিনটা ছিল ১০ এপ্রিল, ২০১০। আজও সে দিনের কথা মনে পড়লে ঘুমের মধ্যেই আতঙ্কে যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠেন বাগদার প্রত্যন্ত গ্রাম চরমণ্ডলের বাসিন্দা বছর বত্রিশের মহিলা। পরক্ষণেই চোয়াল শক্ত করে লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেন তিনি।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বাগদা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩০
Share:

দিনটা ছিল ১০ এপ্রিল, ২০১০। আজও সে দিনের কথা মনে পড়লে ঘুমের মধ্যেই আতঙ্কে যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠেন বাগদার প্রত্যন্ত গ্রাম চরমণ্ডলের বাসিন্দা বছর বত্রিশের মহিলা। পরক্ষণেই চোয়াল শক্ত করে লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেন তিনি।

Advertisement

লড়াই, বেঁচে থাকার। লড়াই, স্বামীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার।

ঘটনার রাতে ঘুমের মধ্যে অ্যাসিড মেরে মহিলাতে খুনের চেষ্টা করেছিল তাঁর স্বামী, অভিযোগ এমনটাই। মুখ-সহ শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে ঝলসে যায়।

Advertisement

দীর্ঘ দিন বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল ও কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন মহিলা। কিন্তু গোটা চিকিৎসার খরচই তাঁর পরিবার বহন করেছে। বৃদ্ধ বাবার সামান্য যা জমি ছিল, তা-ও মেয়ের চিকিৎসার জন্য বিক্রি করে দিতে হয়েছে। বৃদ্ধের কথায়, ‘‘সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মেয়ের চিকিৎসা ও অন্য খরচ হয়ে গিয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। আমাদের মতো পরিবারে অঙ্কটা আকাশ ছোঁয়া।’’

সরকারি ভাবে আজও কোনও ক্ষতিপূরণ বা চিকিৎসার খরচ পাননি ওই মহিলা। আরজিকর-এ তাঁর ইতিমধ্যে দু’বার প্লাস্টিক সার্জারি হয়ে গিয়েছে। আরও দরকার। কিন্তু অর্থের অভাবে তা আর সম্ভব হয়নি বলে জানালেন।

মহিলার পরিবার জানেই না, অ্যাসিড-আক্রান্ত হলে চিকিৎসার যাবতীয় খরচ রাজ্য সরকারের বহন বহন করার কথা। সরকারি ক্ষতিপূরণও পাওয়ার কথা। মহিলা বলেন, ‘‘আমরা তো এ সব নিয়ে কিছু জানিই না।’’

শুধু বাগদার ওই মহিলাই নন, এ রাজ্যে অ্যাসিড আক্রান্তদের বেশিরই ভাগই জানেন না, তাঁদের কী অধিকার রয়েছে। বা কী ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন তাঁরা।

ওই সব অ্যাসিড আক্রান্তদের খুঁজে বের করে তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছে ‘সেভ ডেমোক্রেসি’ সংগঠন। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল শনিবার সন্ধ্যায় বাগদার মহিলার বাড়িতে যান। ঘটনার কথা শোনেন। মেয়েটি ও তাঁর বাবাকে তাঁদের আইনি অধিকার সম্পর্কে জানান। মেয়ের পরবর্তী চিকিৎসার খরচ যাতে সরকার বহন করে এবং পরিবারটি যাতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পায়, সে জন্য তাঁরা জেলাশাসকের কাছে দরবার করবেন বলেও জানান।

চঞ্চলবাবু বলেন, ‘‘২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, অ্যাসিড আক্রান্তদের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ সরকার বহন করবে। সরকারি বা বেসরকারি যে হাসপাতালেই চিকিৎসা হোক না কেন, খরচ দেবে সরকার। পাশাপাশি অ্যাসিড আক্রান্তেরা সরকারি ভাবে ক্ষতিপূরণও পাবেন।’’ কোনও নার্সিংহোম যদি অ্যাসিড আক্রান্তের থেকে চিকিৎসার খরচ চায়, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার কথাও বলা হয়েছে।

সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে গোটা রাজ্যে অ্যাসিড আক্রান্তের একটি তালিকা তাঁরা প্রস্তুত করেছেন। তাঁদের হিসেবে এখনও পর্যন্ত ৮৭ জনের সন্ধান মিলেছে। যাঁদের মুখে প্লাস্টিক সার্জারি করতে হবে, এমন আক্রান্তের বাড়িতেই প্রথম দফায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চঞ্চলবাবুরা। তাঁর কথায়, ‘‘অ্যাসিড আক্রান্তেরা যাতে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন, সে জন্য তাঁদের নিয়ে ১০ ডিসেম্বর কলকাতায় একটি মিছিল করা হবে। সেখান থেকে দাবি তোলা হবে, ওঁদের চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement