প্রশ্ন উঠছে, আনিস অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে তাঁদের বাড়িতে পুলিশ যাওয়ার কথা যিনি বা যাঁরা বেমালুম চেপে গিয়েছিলেন, সেই ওসি এবং জেলার পুলিশকর্তাদের বিরুদ্ধে সিট এখনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কেন?
আনিস খানের মৃত্যুর প্রতিবাদে শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিলে পা মেলালেন আইএসএফ সমর্থকেরা। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
হাওড়ার আমতায় ছাত্রনেতা আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ধৃতদের দাবি, তাঁরা আমতা থানার ওসি-র নির্দেশেই গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সারদা খাঁ গ্রামে আনিসদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। ‘সিট’ বা বিশেষ তদন্তকারী দল সূত্রের খবর, আমতা থানার তিন পুলিশকর্মীকে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদের পরে ওই অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তাঁদের মধ্যে থানার তখনকার ওসি (এখন ছুটিতে) দেবব্রত চক্রবর্তীও আছেন। সিট সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে, সে-দিন থানা থেকেই পুলিশ আনিসের বাড়িতে গিয়েছিল এবং ওসি তা জানতেন। যদিও ঘটনার পর থেকেই ওই ওসি এবং জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা সমানে দাবি করে আসছিলেন, সে-দিন পুলিশের কেউ আনিসের বাড়িতে যাননি।
প্রশ্ন উঠছে, আনিস অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে তাঁদের বাড়িতে পুলিশ যাওয়ার কথা যিনি বা যাঁরা বেমালুম চেপে গিয়েছিলেন, সেই ওসি এবং জেলার পুলিশকর্তাদের বিরুদ্ধে সিট এখনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কেন? ওই ওসি-র শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার ফের সরব হয়েছেন আনিসের বাবা সালেম খান। সেই সঙ্গে প্রথম থেকে তিনি যেমন পুরো ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছিলেন, এ দিন ফের তা জানান। ওই ওসি-কে আপাতত লম্বা ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার দিন আনিসের বাড়িতে ঠিক কী ঘটেছিল, তা তাঁরা জানেন না বলে তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছেন ওসি-সহ ওই তিন পুলিশকর্মী। গত কয়েক দিনের মতো এ দিনেও আমতা থানার পূর্বতন ওসি, সে-দিন টেবিল ডিউটিতে থাকা অফিসার এবং আরটি ভ্যানে থাকা এএসআই-কে ভবানী ভবনে ডেকে পাঠিয়েছিল সিট। তাঁদের কাছে সে-দিনের ঘটনার কথা ফের জানতে চাওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, তিন জনের বক্তব্যে প্রাথমিক ভাবে কোনও অসঙ্গতি মেলেনি।
তবে আনিসের মৃত্যুর পরে তাঁর দেহ তুলতে দেরি হল কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। যদি আনিস পালানোর চেষ্টা করে থাকেন এবং বাড়ি থেকে লাফিয়ে পালাতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে মারা যান, তা হলে সে-কথা তৎক্ষণাৎ উচ্চপদস্থ কর্তাদের কেন জানানো হল না, উঠেছে সেই প্রশ্নও। এই ঘটনায় আর কে কে জড়িত, ওই তিন জনের কাছ থেকে তা জানার চেষ্টা চলছে। পুলিশের একটি অংশ জানিয়েছে, আনিসকে সতর্ক করে মুচলেকা আদায়ের জন্যই সে-রাতে পুলিশ তাঁর বাড়িতে গিয়েছিল। এই বক্তব্য ঠিক কি না, সেই বিষয়েও নিশ্চিত হতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
সোমবার দ্বিতীয় দফায় আনিসের দেহের ময়না-তদন্ত হলেও তার রিপোর্ট নিয়ে এ দিন পর্যন্ত কেউই মুখ খোলেননি। ১৮ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে পুলিশ আনিসের বাড়িতে হানা দেওয়ার পরে আনিসের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তাঁকে ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, না, তিনি নিজেই পালাতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। তবে দ্বিতীয় বার ময়না-তদন্ত করার সময় তাঁর দেহে বহু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।