Enforcement Directorate

পুর-দুর্নীতিও ১০০ কোটির

ইডি সূত্রে অভিযোগ, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং আমলাদের একাংশও এই দুর্নীতিতে জড়িত। বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী এই দুর্নীতির সূত্রে পাওয়া টাকা বেনামে অথবা ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে নির্মাণ ব্যবসায় লগ্নি করেছেন।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৫৯
Share:

—প্রতীকী ছবি।

পুর-নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু স্কুলে নিয়োগ, রেশন বণ্টন, কয়লা-গরু পাচারের পরে বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগের এই দুর্নীতির অঙ্কও ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ইডি সূত্রে দাবি।

Advertisement

এক ইডি কর্তার কথায়, এখনও পর্যন্ত প্রায় দু’হাজার বেআইনি নিয়োগের তথ্যসূত্র হাতে
এসেছে। কোথাও মজুর, কোথাও করণিক, কোথাও কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ হয়েছে। পদ ও বেতন অনুযায়ী ৪ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা ওই সমস্ত প্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। ওই ইডি কর্তার বক্তব্য, ‘‘গড়ে ৫ লক্ষ টাকা ধরলেও দুর্নীতির অঙ্ক প্রায় ১০০ কোটি।’’ তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পুরসভায় এই সমস্ত চাকরিই পাকা সরকারি চাকরি। ফলে অনেকেই তা পেতে টাকা দিতে পিছপা হননি।

শুধু তা-ই নয়, ইডি কর্তাদের একাংশের দাবি, ‘‘দুর্নীতির এই সম্ভাব্য অঙ্ক কিন্তু নিছক অনুমান নয়। ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতির নানা তথ্যসূত্র আমাদের হাতে ইতিমধ্যেই এসেছে। বিভিন্ন পুরসভায় তল্লাশি চালিয়ে বাজেয়াপ্ত করা নথি যাচাইয়ের ফলে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বাঁকা পথে টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়া বেশ কয়েক জনকেও। এই সমস্ত কিছুর ভিত্তিতেই ১০০ কোটির এই হিসাব।’’

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটি, বরাহনগর, উত্তর দমদম, দক্ষিণ দমদম, কাঁচরাপাড়া-সহ প্রায় ১৪টি পুরসভায় নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির কথা প্রাথমিক ভাবে বলা হলেও, এখন ইডি সূত্রের দাবি, সারা রাজ্যে প্রায় ৭০টি পুরসভায় বিভিন্ন পদে বেআইনি ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে।

ইডি সূত্রে অভিযোগ, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং আমলাদের একাংশও এই দুর্নীতিতে জড়িত। বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী এই দুর্নীতির সূত্রে পাওয়া টাকা বেনামে অথবা ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে নির্মাণ ব্যবসায় লগ্নি করেছেন। এক ইডি কর্তার কথায়, ‘‘তদন্তে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, বেআইনি পুর নিয়োগের টাকা এক শ্রেণির প্রোমোটারের মাধ্যমে প্রভাবশালীরা নির্মাণ ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। তা থেকে মুনাফাও করেছেন কোটি-কোটি টাকা।’’ তদন্তকারীদের সূত্রের দাবি, বিভিন্ন পুরসভার প্রাক্তন ও বর্তমান চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও এ বিষয়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
উঠে এসেছে।

উল্লেখ্য, স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত প্রোমোটার অয়ন শীলের বাড়ি থেকেই প্রথম পুর নিয়োগ দুর্নীতির নথি বাজেয়াপ্ত করেছিল ইডি। ওই সব নথি যাচাইয়ের পরে অয়নের সংস্থার মাধ্যমে উত্তর ২৪ পরগনার ছ’টি পুরসভা-সহ রাজ্যের ১৪টি পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছিল বলে তথ্য হাতে আসে। পরে আতশকাচের নীচে আসে ৭০টি পুরসভা। ইডির অভিযোগ, অয়নকে সামনে রেখে পুরসভার কর্তা, কাউন্সিলরদের যোগসাজশে রীতিমতো পরিকল্পনা ছকে বিভিন্ন পুরসভায় নিয়োগ দুর্নীতিতে শামিল হয়েছিলেন রাজ্যের প্রভাবশালী নেতাদের একাংশ। এ বিষয়ে অয়নের বয়ানও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে মামলা দায়ের করে অয়নের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নথির ভিত্তিতে পুর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে তৎপর হয় সিবিআই-ও। তারাও একাধিক পুরসভায় তল্লাশি চালিয়ে নথি বাজেয়াপ্ত করে। বিভিন্ন পুরসভার প্রাক্তন ও বর্তমান চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও পুর আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদও করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি। সিবিআইয়ের এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, “খুব তাড়াতাড়িই আদালতে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।’’ ইডি-রও দাবি, তদন্তের জাল অনেকখানি গুটিয়ে আনা গিয়েছে। এর পরে পুর দুর্নীতিতে জড়িত প্রভাবশালীদের তলব করা হবে বলেও তাদের দাবি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement