নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত প্রসন্ন রায়। ফাইল চিত্র।
বিজ্ঞানের কল্যাণে শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্র তার ব্যবহার যেমন প্রায় সর্বজনীন হয়ে উঠেছে, একই ভাবে দুষ্কৃতী ও অপরাধীদের সুলুকসন্ধানে মোবাইল অপরিহার্য। যেমন দু’টি মোবাইল ফোনের মধ্যে সরকারি চাকরি বিক্রির বহু তথ্য ও নথির হদিস পেয়েছে সিবিআই। তাদের অভিযোগ, ওই দু’টি মোবাইল ব্যবহার করেই শিক্ষা ক্ষেত্রে দেদার চাকরি বেচে কোটি কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। সেই চৌর্যবৃত্তিতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির ভূমিকা স্পষ্ট হচ্ছে তদন্তকারীদের কাছে।
সিবিআই জানিয়েছে, ওই জোড়া মোবাইল নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত প্রসন্ন রায়ের। তাঁর দু’টি মোবাইলই বাজেয়াপ্ত করে সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে গত ১০ বছরের ‘কল ডিটেলস’ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, পার্থ-ঘনিষ্ঠ প্রসন্নের ভ্রমণ সংস্থার অফিস ও বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েও বহু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। সিবিআই জানায়, আদতে পেশায় রংমিস্ত্রি প্রসন্ন ২০১৬ সাল থেকে জমি, বাড়ি, রিসর্ট-সহ বিপুল ‘রিয়েল এস্টেট’-এ কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সেই সব বিনিয়োগ ক্ষেত্রের মধ্যে চা-বাগান থেকে হোটেল সবই রয়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। অভিযোগ, ২০১৬-র পর থেকে পরের পর সংস্থা তৈরি করে ওই সব রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করা হয়েছে। ২০১৬-র পর থেকেই প্রসন্ন ওরফে রাকেশের সম্পত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় রকেট-গতিতে। ২০১৬ থেকে ২০২০, এই পাঁচ বছরে প্রসন্নের প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পত্তি বেড়েছে বলে সিবিআইয়ের দাবি।
সিবিআই জানিয়েছে, বেশির ভাগ সংস্থার ডিরেক্টর হিসাবে প্রসন্ন এবং তাঁর স্ত্রী কাজল রায়ের নাম পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারীরা জেনেছেন, অধিকাংশ সম্পত্তি কিনতে ২০১৬ সালে অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল। পরে ধাপে ধাপে দাম মেটানো হয়েছে। চাকরি বিক্রির বিপুল পরিমাণ কালো টাকা নোটবন্দির সময় জমে গিয়েছিল এবং সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে সেই টাকা সাদা করা হয়েছিল বলে অনুমান করছেন তদন্তকারীরা।
সিবিআইয়ের দাবি, পার্থ-সহ প্রভাবশালীদের সুপারিশ অনুযায়ী অযোগ্য পরীক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি এবং শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে তা নিয়ে সমন্বয় রক্ষা করে অবৈধ ভাবে চাকরির বিক্রির ঘটনায় গভীর ভাবে যুক্ত ছিলেন প্রসন্ন। অন্য দিকে ২০১৬ অর্থাৎ নোটবন্দির সময় থেকে তাঁর মাধ্যমেই সরকারি চাকরি বিক্রির কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করেছেন প্রভাবশালীদের একাংশ। অন্যদের মতো প্রসন্নের ক্ষেত্রেও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর তদন্তকারীদের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিবিআই-কর্তারা।
সোমবার প্রসন্নকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক। ৪৮ ঘণ্টা অন্তর তাঁর শারীরিক পরীক্ষারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিবিআইয়ের আইনজীবী এ দিন আদালতে বলেন, ‘‘প্রসন্নের অফিস ও বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রে বেআইনি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নাম উঠে এসেছে। দুর্নীতি কাণ্ডে তাঁদের কে, কী ভাবে এবং ঠিক কতটা জড়িত, তা জানার জন্য প্রসন্নকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার প্রয়োজন রয়েছে।’’ প্রসন্ন তদন্তে সহযোগিতা করছেন না বলে আদালতে অভিযোগ করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী।
প্রসন্নের আইনজীবী নুর নবি শেখ বলেন, ‘‘আমার মক্কেল অসুস্থ। বছর দশেক আগে তাঁর বাইপাস সার্জারি হয়েছে। তাঁকে দু’দিন সিবিআইয়ের হেফাজতে রাখা হলেও তদন্তে কোনও অগ্রগতি হয়নি। শুক্রবার সিবিআই তলব করার সঙ্গে সঙ্গেই উনি জিজ্ঞাসাবাদে মুখোমুখি হয়েছেন।’’