প্রতীকী ছবি।
ভোট-পরবর্তী হিংসা-রক্তপাত নিয়ে বিরোধী দলগুলির অভিযোগের পর অভিযোগ তো সমানে চলেছে। তার পাশাপাশি ছাত্র শাখার মাধ্যমেও সুর চড়াচ্ছে বিরোধী শিবির। মাধ্যমিকের প্রশ্ন বেরিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে কলেজে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ— সব কিছুকেই হাতিয়ার করছে গেরুয়া ও লাল শিবিরের ছাত্র সংগঠনগুলি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, কলেজ সার্ভিস কমিশন বা সিএসসি-র ‘দুর্নীতি’র প্রতিবাদে ভবিষ্যতে তারা আন্দোলনে নামতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে। চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই আইনি পদক্ষেপের কথা ভেবেছে। তবে এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)।
রবিবার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-এর রাজ্য সম্পাদক সপ্তর্ষি সরকার বলেন, ‘‘স্কুল সার্ভিস (এসএসসি) এবং সিএসসি-তে একই পদ্ধতিতে দুর্নীতি চলছে। রাজ্যের এই শিক্ষামন্ত্রীর আমলে মাধ্যমিক পরীক্ষার সব বিষয়েরই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে ভর্তি থেকে শুরু করে সিএসসি-র মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে রাজ্য সরকার।’’
সিএসসি-র বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগটিকে হাতছাড়া করতে চাইছে না বাম শিবিরও। সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, অনিয়ম আর টালবাহানা। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা চলছে। বাংলার তরুণ প্রজন্মের বর্তমান আর ভবিষ্যৎ— দু’টোকেই অন্ধকারে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস।’’
এ বার সিএসসি-র নিয়োগ-তালিকা বেরোনোর পরেই শুরু হয় বিতর্ক। কমিশন সূত্রের খবর, ইতিহাস, মনস্তত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, ভূগোল, শারীরবিদ্যার মতো বিষয়েই অভিযোগ বেশি। এবং এ বারের অভিযোগ বেশ বিচিত্র! যেমন, ভূগোলে স্নাতক এবং পুরাতত্ত্বে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এক চাকরিপ্রার্থীকে ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের তালিকায় রাখা হয়েছে! আবার স্নাতক স্তরে আদৌ নৃতত্ত্ব না-পড়েও বহু প্রার্থী চাকরি পেয়েছেন। ভূগোলে নিয়োগের ক্ষেত্রেও গরমিলের অভিযোগ আছে বেশ কিছু। সর্বোপরি কলকাতার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তরবঙ্গের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে সিএসসি-তে প্রভাব খাটিয়ে স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাচক্রে ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
বামফ্রন্টের জমানায় সিপিএমের তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে দলের ঘনিষ্ঠদের নিয়োগের অভিযোগ করতেন বিরোধীরা। সেই অভিযোগ এত ব্যাপক, এত তীব্র হয়ে উঠেছিল যে, শিক্ষা ব্যবস্থায় জায়গা করে নিয়েছিল ‘অনিলায়ন’ শব্দটি। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাজনীতিমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আদৌ হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষা শিবিরের অনেকেই।
সিএসসি-র নিয়োগ নিয়ে সৃজনের কটাক্ষ, ‘‘ভূগোল পড়ে আসা শিক্ষকের কাছে ইতিহাসের পাঠ নেবে ছাত্রছাত্রীরা? এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার কী হাল!’’ আর রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করে এবিভিপি-র রাজ্য সম্পাদক সপ্তর্ষি বলেন, ‘‘বর্তমান ছাত্রসমাজ মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীকে এবং এই রাজ্য সরকারকে কোনও দিন ক্ষমা করতে পারবে না।’’
কলেজে শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতার অভিযোগ নিয়ে বক্তব্য জানতে শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু এবং সিএসসি-র চেয়ারম্যান দীপক করকে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের কেউই সাড়া দেননি। দেননি এসএমএসের কোনও উত্তরও।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।