তন্ময় ভট্টাচার্য।—ফাইল চিত্র।
কাটমানি (বখরা) ঘিরে বিতর্কে রাজ্য যখন উত্তাল, সেই সময়েই সেচ দফতরে ঠিকাদারি থেকে টাকা তোলায় তৃণমূলের শীর্ষ মহলের দিকে আঙুল তুলে সরব হল সিপিএম। সেচ দফতরের সঙ্গে সংযুক্ত ঠিকাদারদের একাংশের অভিযোগকে সামনে এনে মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে সিপিএমের বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী ও বর্তমান সেচমন্ত্রীর কাছে দাবি জানালেন, ‘প্যাক্ট মানি’ আদায়ের ওই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য সিপিএম বিধায়কের ওই অভিযোগকে আমল দিতে চাননি।
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গত বছর চিঠি পাঠিয়ে ঠিকাদারদের একাংশ অভিযোগ করেছিলেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক তৃণমূল সাংসদের (চিঠিতে নামোল্লেখ আছে) নামে ঠিকাদারি পাইয়ে দেওয়া এবং ‘প্যাক্ট মানি’ নেওয়ার চল দফতরে চালু আছে। তাঁরা নিজেদের পরিচয় দিয়েছিলেন ‘ডিস্ট্রেস্ড কন্ট্রাক্টর্স অফ ইরিগেশন অ্যান্ড ওয়াটারওয়েজ ডিপার্টমেন্ট’ নামে। সেখানে বলা হয়, তৎকালীন সেচমন্ত্রীর ব্যবস্থাপনায় ওই সাংসদের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করা এক ব্যক্তি (তাঁরও নাম চিঠিতে আছে) টাকা নেওয়ার ব্যাপারটি দেখভাল করতেন। নির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদারকেই বরাত পাইয়ে দেওয়া হতো। ঘাটালের পলাশপাই নদীর উপরে ৭০ কোটি টাকার একটি নির্দিষ্ট প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা ছিল চিঠিতে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ওই অভিযোগকারীদের আবেদন, ‘গুণগত মান’ এবং সংস্থার ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’র পরোয়া না করে এ ভাবে ঠিকাদারির বরাত পাইয়ে দেওয়া চলতে থাকলে সেচ দফতর উঠে যাওয়ার উপক্রম হবে! এই চিঠির বিষয়বস্তু উল্লেখ করেই বিধানসভার মিডিয়া সেন্টারে এ দিন সরব হন তন্ময়বাবু এবং বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী।
ঠিকাদারদের ওই অভিযোগের কথা এ দিন সেচ দফতরের বাজেট আলোচনায় বিধানসভাতেও তুলতে চেয়েছিলেন তন্ময়বাবু। কিন্তু স্পিকার গোটা বিযয়টি কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে বাইরে সেচমন্ত্রী শুভেন্দুও বলেন, ‘‘যারা ৭%-৮% ভোট পেয়েছে, তাদের অবান্তর কথার কোনও গুরুত্ব নেই।’’ কংগ্রেসের সচেতক মনোজ চক্রবর্তী আবার মনে করিয়ে দেন, বহরমপুর লোকসভা আসন না জিতলে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কথা যিনি বলেছিলেন, তাঁর এমন ‘ঔদ্ধত্য’ শোভা পায় না।
সভার বাইরে তন্ময়বাবু বলেন, ‘‘সেচ দফতরে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৮০০ কোটি টাকার ঠিকাদারির বরাত দেয়। তার মধ্যে ৫% অর্থাৎ প্রায় ৯০ কোটি টাকা শাসক দলের বিশেষ নেতাদের দিতে হয় বলে অভিযোগ আছে। বর্তমান সেচমন্ত্রী যাতে এই কারবার বন্ধ করতে উদ্যোগী হন, সেই দাবিই জানাতে চেয়েছিলাম।’’ আর সুজনবাবু স্পিকারের উদ্দেশে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘কারও বক্তব্যের নির্দিষ্ট অংশ সভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া যায়। কিন্তু গোটা বিষয়টিই একেবারে নথিভুক্ত করতে না দেওয়া কেমন বিচার?’’