বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
কয়লা, পাথর বা বালি পাচার থেকে শুরু সোনা-কাণ্ডে এর আগে অভিযোগ করেছেন তিনি। এ বার আরও এগিয়ে নোট-বাতিলের সময়ে অন্তত এক হাজার কোটি টাকার পুরনো নোট ‘ভাইপো’ বদল করিয়েছেন বলে অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অতীতের মতো এ বারও সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করেননি তিনি, সামনে রেখেছেন ‘ভাইপো’কেই। তাঁর ইঙ্গিত কার দিকে, তা বুঝে নিয়ে শাসক দল তৃণমূল অবশ্য এমন ‘চাঞ্চল্যকর’ অভিযোগের প্রমাণ চেয়ে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করেছে শুভেন্দুকে। পাশাপাশিই তাদের প্রশ্ন, নোট-বাতিলের সময়ে তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী থাকা শুভেন্দু এমন ঘটনা দেখেও প্রতিবাদ করেননি কেন?
এর আগে শুভেন্দু যত বারই সোনা, বালি, কয়লা পাচার বা তোলাবাজির অভিযোগ ‘ভাইপো’র নামে করেছেন, তার লক্ষ্য হিসেবে অভিষেক প্রশ্ন তুলেছেন, সরাসরি তিনি নাম করেন না কেন? নাম করলে তার বিরুদ্ধে যে আইনি ব্যবস্থা হবে, তার মোকাবিলা করতে পারবেন না বলে? অভিষেক সে কথা বললেও নোট-বদলের প্রসঙ্গে শুভেন্দু তাঁর একই ‘ভাইপো-কৌশল’ বজায় রেখেছেন।
খড়গপুরের ইন্দা এলাকায় রবিবার একটি স্বাস্থ্যমেলার অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। সেখানে অনুব্রত মণ্ডলের জেলা বীরভূমে সমবায় ব্যাঙ্কের ভুয়ো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তখন তিনি বলেন, ‘‘অনুব্রতের যদি একশো কোটির নোট বদল হয়ে থাকে, ভাইপোর এক হাজার কোটি টাকা তাঁর পি এ করিয়েছেন! কাকে কাকে এজেন্ট লাগিয়েছিলেন, তার তালিকা আমার কাছে আছে।’’ শুভেন্দুর আরও অভিযোগ, ‘‘পুরনো নোট বদল করেছে ভাইপো। আমি এক হাজার লোকের নাম দিয়ে দেব। পেট্রল পাম্পের মালিক, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন থানার আইসি-দের মাধ্যমে বস্তা বস্তা পাঁচশো-হাজার টাকার পুরনো নোট বদল করা হয়েছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলে দেব!’’’
পরে পূর্ব বর্ধমানে একটি সভার পরেও প্রশ্নের জবাবে এ দিন শুভেন্দু ফের বলেছেন, ‘‘মোদীজি বেআইনি টাকা আটকানোর জন্য নোটবন্দি করেছিলেন। ভাইপো তাঁর পি এ এবং ক্যাডারদের মাধ্যমে টাকা বদল করিয়েছে।’’ বর্ধমানের এক যুব নেতা, রাজ্যের এক মন্ত্রী এবং মুগবেড়িয়ার এক তৃণমূল নেতার কথাও এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন শুভেন্দু।
এমন অভিযোগের জবাবে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘শুভেন্দু রাজ্যের বিরোধী দলনেতা নন, অভিষেক-বিরোধী দলনেতা! ওঁর শয়নে-স্বপনে-জাগরণে অভিষেক! আমার প্রথম প্রশ্ন, যে তথাকথিত বিস্ফোরক অভিযোগ উনি করছেন, তার প্রমাণ দিন। কেন্দ্রীয় সংস্থা তো ওঁদের দলের কাছে আছে, তাদের হাতে তুলে দিন, তার পরে তথ্যগুলো মানুষের কাছে দেখান। অভিষেক তো যা যা বলার, বলে রেখেছেন এই কুৎসার জবাবে।’’ কুণালের সংযোজন, ‘‘দ্বিতীয় প্রশ্নটা আরও মারাত্মক। যে সময়ের নোটবন্দির কথা উনি বলছেন, তখন তো উনি একের পর এক দফতরের মন্ত্রী। প্রবল ক্ষমতাশালী নেতা! উনি এবং ওঁর পরিবার মিলে দল ও সরকারের পরপর ক্ষমতায়। প্রতিবাদ করেননি কেন? আজ নিজের গ্রেফতারি ঠেকাতে, সিবিআই-ইডির ভয়ে বিজেপিতে গিয়ে কাদা ছুড়ছেন? এতই যদি বিবেকবান, এর প্রতিবাদ করে তখনই ছাড়েননি কেন?’’
সাম্প্রতিক কালে বারংবার পরস্পরকে নিশানা করেছেন অভিষেক ও শুভেন্দু। কয়লা বা বালি পাচার, সোনা-কাণ্ডে কখনও শুভেন্দু তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দিকে আঙুস তুলেছেন, কখনও তাইল্যান্ডের একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি বলে দাবি করে কাগজ দেখিয়েছেন। মাঝে কিছু দিন দাবি করেছেন, ডিসেম্বরে ‘বড় চোর’ ধরা পড়বে! অভিষেক আবার সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় দুর্নীতির জন্য তৎকালীন তৃণমূলের নেতা এবং বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। নোট-বাতিল সংক্রান্ত অভিযোগ করে এ দিন শুভেন্দু আরও কয়েক ধাপ এগোলেন।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের তরফে কুণালের মন্তব্য, ‘‘এখন উনি (শুভেন্দু) সরকারের কোনও বিভাগের নিন্দা করেন, কখনও অভিষেককে আক্রমণ করছেন। তখন এই বিষয়গুলো তুলে উনি ছেড়ে যাননি কেন? যখন সারদায় উনি তদন্তের মুখে পড়লেন, নারদায় সিবিআই এফআইআরে নাম করে দিল, তখন উনি ভোটের আগে বিজেপিতে গেলেন। তার আগে তো দল ছাড়েননি। কত বড় সুযোগসন্ধানী, বেইমান, ধান্দাবাজ, এর থেকে বোঝা যায়!’’
সিপিএম অবশ্য এই তরজার রাজনীতিতে বিজেপি ও তৃণমূল, দু’পক্ষকেই বিঁধেছে। হুগলির বাঁশবেড়িয়ায় সিটুর জেলা সম্মেলন উপলক্ষে সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে এ দিন এই সংক্রান্ত প্রশ্নে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গরিবের কথা বাসি হলে কাজে লাগে! আমরা তো কত দিন ধরেই প্রশ্ন তুলে আসছি, নোটবন্দির সময়ে টাকার বান্ডিল নিয়ে পুলিশ পাহারায় এত গাড়ি কোথায় যেত? সেগুলো কি সিকিমের দিকে যেত? টাকা রাখার কি বাড়তি বন্দোবস্ত ছিল? তৃণমূল নেতাদের টাকা রাখার ব্যবস্থায় পুলিশ সাহায্য করেছিল, আমরা বলেছি। তৃণমূলের নেতারা এ সব প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি। শুভেন্দু তো তখন তৃণমূলেই ছিলেন! এখন তাঁর মনে পড়ল? অপেক্ষা করুন, এর পরে অভিষেক বলবেন শুভেন্দুর টাকা কোথায় গিয়েছে!’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘এখন ঘরোয়া ঝগড়া বেধেছে। শুভেন্দু এ সব বলছেন। ওঁদের তো সব একই রকমের বন্ধু (কমন ফ্রেন্ড) আছে না!’’